যাদুঘর
সেখানে নিপুণ রাখা
মেঘ কিংবা বৃষ্টিভেজা রোদের নাম
কিছু হাসি অনির্বাণ তারুণ্যের শিখা;
যেন কোন ফেলে-আসা স্টেশনের ছায়া-নাম লেখা
ফোঁটা কয় সুনিবিড় জল
ঘাসের আগায় টলমল।
এবং ঝড়ের চিহ্ন, তাও থাকে যন্ত্রণার মতো—
সুগভীর ক্ষত।
তবু দেখো,
হিরণ্যসময় ব্যেপে অনন্তকালের কিছু কথা
বিচ্ছুরিত হয় কোনও দূরান্তের স্মৃতিসত্তা থেকে;
স্বপ্নে লেখা নাম কিংবা
বিশ্বাসের মতন পাহাড়
ফিরে দেয় মাটি পদতলে।
দুয়ার থেকে দূরে
দুয়ার থেকে দূরে গেলেই
গহীন-গাঙে উন্মোচিত ঢেউ
প্রেক্ষাপটে অনচ্ছ মুখগুলি
সিন্ধুজলে কঠিন বিষণ্ণতা
দুয়ার থেকে দূরে গেলেই
মনের ভেতর আরও অনেক মন
মধ্যরাতের কঠিন জিজ্ঞাসাতে
পত্রভরা হাজার প্রতিশ্রুতি
দুয়ার থেকে দূরে গেলেই
আকাঙ্ক্ষিত গাঢ় সবুজ বন
পাহাড় চূড়ায় দূরের প্রতিধ্বনি
হাজার সূর্যে হিরন্ময়ের দ্যুতি।
সময় তেমন কিছু
সময়
তেমন কিছু
আবহাওয়ার টিনের মোরগ নয়
যে তোমার হাওয়া বুঝে মুণ্ডু ঘোরাবে
কিংবা তুলবে আওয়াজ।
অথবা
সে নয় কোনও
অফিসের বিনীত চাপরাশি
মুখে হাসি জানিয়ে সেলাম
সর্বদাই বলে যাবে— গোলাম হাজির।
সময়
বিচিত্র এক ডাকহরকরা
দোরে সেঁটে আদালতী কঠিন শমন
নিখুঁত হিসেব কষে কার কত জমানো ফসল
কিংবা কার জমি অনাবাদী।
হেমন্তের বিষণ্ণ বিকেলটুকু
হেমন্তের
বিষণ্ণ বিকেলটুকু
হারিয়ে গেলেই দেবদারুর
দিকে প্রার্থনার হাত বাড়ায়। যদিও তখন
আকন্দ কুয়াশার দল আনত
পল্বলে পারদের মতো গাঢ়তম
এবং পায়ের নীচে গৈরিক
গোধূলি বাঞ্ছিত
আসন্নতায়
নিপুণ
অভিসারিকা
ইন্দ্রধনু পেরিয়ে গেলেই
ইন্দ্রধনু
পেরিয়ে গেলেই
সোনার সীতা
অশোকবন।
আসন্নতায়
হৃদয় ক্ষতে
প্রাচীন কাঁটা
চমকে ডিঙোই
সময়সীমা
অহংকারের
পলাশ মন।
বিষণ্ণতা
থমকে থাকে
দীর্ঘবাহু
প্রলোভনে
শীত পোহালে
পায়ের ছাপে
প্রতিধ্বনি
চিরন্তন।
ইন্দ্রধনু
ছাড়িয়ে গেলেই
মনের মায়ায়
আরেক মন।
বদর বদর সামলে যেয়ো নাও
খুঁজো না সেই শিউলি ঝরার—
শিশির ভেজার দিন,
কেউ খুঁজো না,
বুকের গভীর স্বপ্ন দেখার ছল।
অবাধ্য মন এই মোহনায় বেয়ো না কো দাঁড়
বদর বদর সামলে যেয়ো নাও।
সফল দিনের বিফল স্মৃতি—
খুঁজো না আর কেউ
দিঘির পরেই নয়ানজুলির বাঁক।
সাবধানেতে এড়িয়ে যেয়ো ইচ্ছেগুলো মুড়ে
উথালপাথাল ঢেউয়ের ছলাৎছল।
সেখানে যা সাধ মিটিয়ে দেখে দুচোখ ভরে
তৃষ্ণাজলে আঁজলা পুরে দাও
গহীন রাতে আকাশপারের শেষ তারাটি চিনে
বদর বদর সামলে যেয়ো নাও।
শব্দের মিনারগুলি
শব্দের মিনারগুলি
ভেঙে গেলে সময়ের ভারে
আমি যেতে পারি আরও দূরে।
এবং রোদ্দুরে
ধমনী সুষুম্না থেকে মুছে ফেলে মুখর উত্তাপ
স্থির চিত্তে হতে পারি পরাহ্ন সঞ্চারী
কিংবা এই
অভিরাম দৃশ্যের বাহিরে
অহংকারী রামধনু-আকাশ পেরিয়ে
নর্মহীন পারি যেতে দূর দ্বীপান্তরে;
যখন প্রান্তরে
অমল সোনালি রোদ
সুমসৃণ নিভে গেছে বিষণ্ণ কার্নিশে
উচ্চারিত অন্ধকারে মিশে।
তবু এই কল্লোলিত বিস্মৃতির নীলে
নামগোত্রহীন শুধু মুখের মিছিলে
আদিগন্ত খুঁজে ফেরা
চতুঃসীমা কোনও;
কখনও কখনও
হিরন্ময় জীবনের অন্য এক মান—
দেবদারু আকাঙ্ক্ষার আলোকিত
জংশন স্টেশন।
রৌদ্রময় দ্রুত দিনগুলি
রৌদ্রময় দ্রুত দিনগুলি
অশেষ পেরিয়ে দ্যাখো—
একে একে কাছে আসে উদাসীন চলে যায় দূরে।
যেন বহু ঘুরে,
পরাহ্নে নিঃসঙ্গ ট্রেন আলোজ্বলা স্মৃতির স্টেশন—
তারে দোলে মাছরাঙা, বিলে বক, ডাহুক ডাহুকী আনমন
অকস্মাৎ আসে কাছে একে একে দূরে চলে যায়;
ফুলন্ত যৌবনগুলি বয়স্ক ইচ্ছার ভারে বাঁকাপিঠ যেমন নোয়ায়
ঘনিষ্ট সূর্যের স্থিরে, মাটি ভেজা ঘামে,
কিংবা মধ্যযামে—
বহু ধান কাটা হাত, কাদা জলে আসাধ্য লাঙল
কেন্দ্র থেকে দিগন্তে ফেরার মুখ
কেন্দ্রাতিগ এ কোন অসুখ।
একে একে কাছে আসে উদাসীন দূরে চলে যায়।
আমার স্বপ্নের পাখি শোণিত প্রবাহে তবু ওড়ে
আলোড়িত আস্থির ডানায়।
সন্ন্যাসীটা দাঁড়ায়
সন্ন্যাসীটা দাঁড়ায়
কখন বাউল সাড়ায়
সুখের বনে দুখের খোঁচা যেভাবে পা বাড়ায়
এবং যেমন ভিড়ের ভেতর মুখগুলো সব হারায়
যখন অশ্রু অমল।
অন্বেষণের রাতে
মায়াবী কার হাতে
এপার ওপার দুপার থেকেই বিসংবাদী তাড়ায়
জন্ম মৃত্যু স্মৃতির নিকেশ খেলার ছলে নাড়ায়
ভিড়ের ভেতর মুখগুলি সব এমনি করেই হারায়
যেমন অশ্রু অমল।
ভালোবাসার ক্ষণে
পড়লে কুশল মনে
ভুল হিসেবে ভাঙতে পাহাড় রক্ত কেবল ঝরায়
হৃদয় নামক বিফল ফসল পায়ের নীচে ছড়ায়
বুকের ভাঁজে যন্ত্রণাটা যেভাবে পা বাড়ায়
তেমনি করেই ভিড়ের ভেতর মুখগুলি সব হারায়
যখন অশ্রু অমল।
সূর্যমুখী পাওয়া
দুরন্ত সব
মাঠ পেরিয়ে
ঘাট
পেরিয়ে
পথে,
ছেলেবেলার ইচ্ছেগুলো
সোনালি বিশ্বাসে
করিন্থিয়ান থামের মতো
জড়িয়ে ধরে হাওয়া।
—সূর্যমুখী
পাওয়া।
নিভলে আলো
কান্না ছুঁয়ে
দূরে,
সাগর
থেকে
তৃষ্ণা নামে সারাটা
বুক জুড়ে। রক্তে তবু
জমাট ভালোবাসা
কতদিনের ইচ্ছে-সিঁড়ি বেয়ে
—প্রগল্ভ
সুখ চেয়ে।
সমর্পিত ধূসর
পায়ে পায়ে
সবুজ
বাতি
পেরিয়ে
এসেও জটিল অন্ধকারে
গভীর গভীর মুখগুলো সব
হারিয়ে গেছে দূরে। চোখের
জলে অটুট ভালোবাসা
— পরশমণির
আশা।
কাকে পাবার
ইচ্ছে ছিল
সরলো
দূরে
কারা,
ডাকলো কেবা পিছে
এসব এখন অবাঞ্ছিত।
ভাবনাগুলো শুধু
সফলতার পাশে
—উচ্চকিত
হাসে।
দুরন্ত সব
মাঠ পেরিয়ে
ঘাট
পেরিয়ে
পথে,
ছেলেবেলার ইচ্ছেগুলো
সোনালি বিশ্বাসে
করিন্থিয়ান থামের মতো
জড়িয়ে ধরে হাওয়া।
—সূর্যমুখী
পাওয়া।
...
তখনও স্কুলের দিন শেষ হয়নি আমার। বাঁকুড়া বইমেলায় কিনেছিলাম শিশির ভট্টাচার্যের কবিতার বই ‘তবুও তোমার নামে’ (প্রথম প্রকাশ: ১৯৭২, প্রচ্ছদ: গৌতম রায়, অনন্য প্রকাশন, মুল্য: তিন টাকা)। বারবার পড়ি বইটি, তখন আমার কবিতা চেনার সময়। একটি পত্রিকায় কবিরা ছবিসহ বইটির বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে, ছবিটি আমি কেটে রাখি।
পরবর্তীতে শিশির ভট্টাচার্যের আরেকটি বই ‘শব্দের মিনারগুলি’ সংগ্রহ করি। এই বইয়ের ভূমিকায় দিনেশ দাস লিখেছেন, “শ্রী শিশির ভটাচার্য বাংলা কাব্যজগতে অপরিচিত নন। দেশের বর্তমান অনিশ্চিত পরিবেশের মধ্যে যাঁরা বাংলা কাব্যের ভাগীরথী-ধারাকে প্রবহমান রেখেছেন শ্রীমান শিশির তাঁদের অন্যতম। ... শ্রীমান শিশিরের কবিতার মধ্যে সুখ-দুঃখ, আশা-নিরাশার দ্বন্দ্ব থাকলেও কবিতাগুলি একটি প্রবল আত্মবিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত।”
‘কফি হাউসের সেই লোকটা’, ‘কখনো মুহূর্তের আলো’ কবির আরও দুটি বই।
আজকের পাঠকের হয়তো শিশির ভট্টাচার্য পরিচিত নন। ‘তবু এই কল্লোলিত বিস্মৃতির নীলে’ তাঁর কিছু কবিতা সংকলিত হল।
কবির সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক অন্যান্য তথ্য দিয়ে যদি কেউ আমাদের সমৃদ্ধ করেন, এই প্রার্থনা। (অনিন্দ্য রায়)
সমৃদ্ধ হলাম। কবিতার সঙ্গে পাঠকের পরিচয়ের এই কাজগুলি সত্যিই খুব ভালো।
ReplyDeleteসবটাই ভীষণ ভালো♥️
ReplyDeleteভীষণ আলাদা। খুব ভালো
ReplyDeleteএক বিষাদ-সরণি ঘরে হেঁটে এলাম। এইগুচ্ছ জুড়ে এক দীর্ঘ টানেল। এ প্রান্তে এসেও ঘোর কাটে না।
ReplyDelete- মাসুদার
খুব ভালো লাগলো। সমৃদ্ধ হলাম।
ReplyDeleteলেখাগুলি বেশ ভালো লাগলো
ReplyDeleteঅন্য অভিজ্ঞতা। একেবারে কন্য ঘরাণা। কবিতার দৃশ্যকল্প, অনুভবের এই আবেশ অন্য পৃথিবীর কোথায় রে নিয়ে গেল ।🙏🙏🙏
ReplyDeleteঅন্য অভিজ্ঞতা। একেবারে কন্য ঘরাণা। কবিতার দৃশ্যকল্প, অনুভবের এই আবেশ অন্য পৃথিবীর কোথায় রে নিয়ে গেল ।🙏🙏🙏
ReplyDeleteঅন্য অভিজ্ঞতা। একেবারে কন্য ঘরাণা। কবিতার দৃশ্যকল্প, অনুভবের এই আবেশ অন্য পৃথিবীর কোথায় রে নিয়ে গেল ।🙏🙏🙏
ReplyDeleteচমৎকার লাগলো
ReplyDeleteচমৎকার লাগলো
ReplyDeleteচমৎকার লাগলো
ReplyDelete