বাক্‌ ১৪৫ ।। হিন্দোল ভট্টাচার্য

 

কবিতাগুচ্ছ

 

 

ইনফের্নো

 

 যেভাবে তোমার কাছে ছুটে আসে অনন্তের ছায়া 

 

আমিও তোমার সঙ্গে বসে থাকি রাত- পাহারায় 

 

দুঃখের শহর,  তুমি এত লোক চিনতে ভুল করো!  

 

এমন করেই আরও বাড়িয়েছ মফস্বলগুলি

 

আদিম মহেঞ্জোদরো প্রসাধন করে যেন দাঁড়িয়ে রয়েছে...

 

আকাশে কাঁচুলী উড়ছে, ঘরে ঘরে দেওয়ানেওয়া হল...

 

 দুগালে ফ্যাকাশে ছোপ, চোখের তলায় ঘন কালি

 

যেন সন্ধ্যা সাতটা বাজলে যুদ্ধবুলেটিন শুরু হবে...

 

ওদিকে এখনও কারা বলে যায় ভোরে দোর খোলো

 

শ্মশানভূমিতে শুরু হবে আজ কবিতা উৎসব...

 

 

 

বাংলা

 

যে চোখ বৈরাগী, তার বুকের কোটরে আছে সাপ 

 

প্রাচীন মৃত্যুর বিষ, ফণায় সাইকোপ্যাথ ছুরি 

 

সে প্রেমের গান গায়,  কৃষ্ণ বাজে তৃতীয় নয়নে 

 

মায়াবী পূজার ঘরে আদিম মৃদঙ্গ বাজে শুধু 

 

যে চোখ বৈরাগী,  তার বিষাদের পদাবলি নেই 

 

জড়িয়ে ধরেছে নাগ, বাসুকীর গুহামুখ যেন 

 

আমিও কীর্তন ধরি,  শুনি কারা ধুলোয় সমাধি 

 

শুনি চরাচর জুড়ে একটি একতারাই বাজে 

 

সতর্কবার্তার শঙখ বাজিয়ে চৈতন্য, চেতনায় 

 

লিখে যান পোড়া মাটি, লিখে যান শ্রীবঙ্গকীর্তন 

 

নদীজলে ভেসে যায় বৈরাগীর নাড়িছেঁড়া দেহ...

 

শুনি চরাচর জুড়ে একটিই একতারায় বাজে 

 

' মন্দিরে গৌরাঙ্গ নেই', ঝরা পাতা পড়ে আছে মাঠে 

 

প্রাচীন উপমা, তবু চরাচরে আর কিছু নেই

 

 

জল

 

আমাকে পাবে না তুমি আর কোনও ঘরোয়া আসরে 

ভেঙে পড়ে যাওয়া সব কাচের জানলায় 

গড়িয়ে পড়েছে সব জল 

 

আমাকে পাবেনা তুমি ঝড়ে, জলে, আগুনে, দরগায় 

আমিও তো জল মাপি 

কত বিশ বাঁও গেলে পাওয়া যাবে তল 

 

একটি বাঁশির সুর জেগে আছে তবু আড়ালেই 

যুদ্ধ থেকে দ্যাখো ঠিক আমি তাকে কুড়িয়ে এনেছি

 

আমাকে পাবে না তুমি আর কোনও ঘরোয়া আসরে 

বাঁধা আছে কবেকার ডিঙি...

 

তোমায় সকল হতে হবে আর আমায় একাকী

 

 

 

রূপকথা

 

একটি নশ্বর চাঁদ অমরত্ব চেয়েছিল খুব 

 

তাহার মাথার মধ্যে রাশিয়ান স্লেজ ছুটে গেল 

 

যেন মফস্বল গলি শেষ হলে বারিস্তার কফি 

 

ঝোপের ভিতরে পাওয়া গেল ছেঁড়া চিঠি ও ব্লাউজ 

 

রক্তদাগ ধরে ধরে বেশিদূর যাওয়া তো যায় না 

 

বাতাসে  ক্রাইমগন্ধ বহুদিন অক্ষত থাকেন 

 

তিনিও নশ্বর, তবু, কেউ কেউ অপরাধ বোঝে 

 

চাঁদের হিসাবমতো, অমরত্বে কলঙ্ক থাকুক

 

তবু অমরত্ব চাই, দেহ নয়, দেহ যার জমি 

 

তাকে চাই, চাঁদ তার নিজের ছায়ায় ডুবে যায় 

 

নশ্বর চাঁদের ছায়া,  সেও তো নশ্বর, তাই তার 

 

ছায়া ভেঙে যায় আর চন্দ্র ওঠে ড্রাকুলার মতো 

 

ঠোঁটের ডগায় তার কিশোরীর ধান লেগে আছে

 

 

12 comments:

  1. খুব ভালো লাগল। ঠোঁটের ডগায় তার কিশোরীর ধান লেগে আছে। ❤️❤️❤️

    ReplyDelete
  2. মুগ্ধ হলাম। অসাধারণ

    ReplyDelete
  3. খুব ভাল লাগল, হিন্দোল।

    ReplyDelete
  4. "আমাকে পাবেনা তুমি ঝড়ে, জলে, আগুনে, দরগায়

    আমিও তো জল মাপি

    কত বিশ বাঁও গেলে পাওয়া যাবে তল"

    অসাধারণ সবকটিই

    ReplyDelete
  5. খুব ভালো লাগল সবকটা কবিতাই

    ReplyDelete
  6. ভালোবাসার কবির হাতে ভালোলাগা কবিতা পড়লাম

    ReplyDelete
  7. Lekhagulo porlam. sporsho kore diye gelo...

    ReplyDelete
  8. এসব কবিতাই তো পুজোর প্রাপ্তি।মন বেঁচে ওঠে ভালো লেখা পড়লে...
    চৈতালী চট্টোপাধ্যায়

    ReplyDelete
  9. "একাকী" কবির প্রাতিস্বিক কণ্ঠস্বর

    ReplyDelete
  10. জল টা সব থেকে ভালো লেগেএছে

    ReplyDelete
  11. শেষাবধি কী লিখব জানি না। তবে এসব কবিতা পড়ে আবার লেখায় উদ্দীপ্ত হলাম। কখনও কখনও একেকটা লাইনকেই পূর্ণাঙ্গ কবিতা মনে হয়েছে।

    ReplyDelete