বাক্‌ ১৪৫ ।। শ্যাম পুলক


 

কাক ডেকেছে ভবিষ্যতে

কেউ দুটি কাঠের পিঁড়া দুই হাতে নিয়ে হঠাৎ একটার পিঠে অন্যটা দিয়ে আঘাত করেছে। বৃদ্ধার মুখে ভাঁজ পড়েছে, চোখ মেলে তাকানতার মুখে সকালের স্বচ্ছ আলো পড়েছে, কাচের মতো, কাচ ভেদ করে ছায়ার আবির্ভাব শূন্যতাচোখে আলোর ঝিলিকজ্বলজ্বলে প্রতিচ্ছায়াসকলকে অবাক করে তিনি চিৎকারের ভঙ্গি করেছেন। কিন্তু সকলের কানেই শান্ত কিছু শব্দ উচ্চারিত হয়েছে। শব্দগুলো এমন যে অন্ধকার রাতে কানে কানে কেউ কিছু বলছে। কিন্তু তার অন্তর্নিহিত বোধটা চিৎকারেরপ্রতিবাদের; একইসাথে শব্দগুলো নতুন দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। ঘরের পিছনে একটি বিশাল শিমুলগাছ। সেখান থেকে মৌমাছির গুনগুনারির শব্দ আসছে। শিমুলের ডালে ডালে ওরা প্রায় আট-দশটা মৌচাকে মধুসংগ্রহ করছে। যখন শহরগামি সকালের লঞ্চের হুইসেল ভেসে আসেযতো দূর থেকে ভেসে আসলে সংগীতের মতো মনে হয়। সকলেই বৃদ্ধার কথা নিজেদের সকল উত্তেজনা চেপে শুনে। তাদের শুনার ভঙ্গি হয়তো বৃদ্ধাকে শক্তি দেয়। তার নিজের চিৎকারের ভঙ্গিও অব্যাহত থাকে।

বৃদ্ধা ঘরের এক কোণে কাঠের একটা ছোট নিচু খাটে বসে আছে। তাতে কেবল একটা পাতলা সাদা কাপড় বিছানো। কাপড়ের ওপর রঙিন সুতার কাজ করা। খুব ভোরে তার এক মেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছে। তার চোখেমুখে বেশ উত্তেজনা আছে। সে মায়ের ছোট নিচু খাটের বিপরীত পাশেদক্ষিন পাশেপাতানো খাটের এক কোণে বসেছেতার পাশেই তার এক ভাই এর স্ত্রীঅচেনা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেভাই খাটের পাশে রাখা এক বেতের চেয়ারে বসেছে। বৃদ্ধা যখন কথা বলছে, তখনও কেউ কেউ বারবার সেই ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছে। মায়ের ঠিক পাশে এক জলচৌকিতে তার আর এক ছেলে বসেছে। তার মুখে উত্তেজনার পাশাপাশি বালকসুলভ হালকা হাসি আছে। তার স্ত্রী ঘরের পেছনের বারান্দায় পাতা খাটে বসাতাকে পুরো দৃশ্যপটের বাইরের কেউ মনে হচ্ছে। সে কেবল বারবার দৃশ্যে উঁকি দিচ্ছেবৃদ্ধার ঠিক মুখোমুখি আরেক চেয়ারে তার বড় ছেলে বসে আছেযে বারবার দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ছে। সে যেন টের পাচ্ছে, কিছু একটা এলোমেলো। তার চোখ গভীর কালো। কিন্তু সকলের মতো সেও যেনো সম্মোহিত। দরজার সামনে জলচৌকিতে আরেক ছেলে মাথা নিচু করে বসে আছেএক হাতে এক কান ঢেকে রেখেছে। তার পেছনে মুখে অর্ধআঁচল দিয়ে তার স্ত্রী দাঁড়িয়েতাছাড়া এদিক সেদিক আরও অনেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বড় ছেলের স্ত্রী বার কয়েক দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে গেছে। আর এমন ভাব করেছেতার যেন জরুরি কোন কাজ পড়ে গেছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকাদের মধ্যেছেলেমেয়েরা কেউ কেউ বেশ উত্তেজিত বোধ করছে। কেউ কেউ বাবামাকে প্রশ্ন করতে চাচ্ছে। আর কেউ কেউ এ নিয়ে তেমন মাথা ঘামাচ্ছে নানিছক শুনছে। তবে সবার মধ্যেই একটা জাদুর আবেশ ছড়ানো।

একসময় আলো আর কাচের মতো স্বচ্ছ থাকে না। মনে হতে থাকে কাচের ওপর যেনো হলুদাভ একটা ছায়া লেপ্টে গেছেযে ছায়া আলোকে ছায়া করতে পারেনিএবং সবাই যখন আচমকাই একে অন্যের দিকে তাকায়, গাণিতিক সম্ভাব্যতার হিসাবে না, এক মসৃণ ভয় সবার চোখে মুখে লক্ষ্য করে। তাদের মুখের বাদামী রঙের ত্বক কেমন ফ্যাকাসেযদিও তারা সুনির্দিষ্ট সময়ের সম্ভাবনার হিসাব বৃদ্ধার মুখে শুনেছে। সেটা অবশ্যই তাদের সময়কে সরল করেছে। কিন্তু তাদের মুখের রঙ বদলের অস্তিত্ব রোদের তীব্রতায় ভাবিয়েছে। বৃদ্ধার মেয়ে শ্বশুরবাড়ির দিকে রওনা দিয়েছে। যে ভাই খাটের পাশে বেতের চেয়ারে বসেছিলোযার দিকে বৃদ্ধা কথা বলার সময়ও অন্যরা বার বার তাকাচ্ছিলোসে ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তার দিকে যায়। বৃদ্ধার যে ছেলে দরজার সামনে বসেছিলো সেও ভাইয়ের সাথে যোগ দেয়। তার স্ত্রী বাড়ির উঠানের দিকে যায়। অন্যরা বৃদ্ধার কাছে বসে থাকে। কেউ কোনো কথা বলছে না। কেবল পান খাবার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।

দুই ভাই গ্রামের পথ ধরে হাঁটতে থাকে। একভাইয়ের বাদামী চামড়া রৌদ্রের তাপে পুড়েছে। সে ঘরে বেশিরভাগ সময় মাটির মেঝেতেই তাকিয়ে ছিলো। ভাইয়ের দিকে একবারও তাকায়নি। এখন যখন ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছে, কেমন এক অস্বস্তি বোধ করছে। বেতের চেয়ারে বসে থাকা বৃদ্ধার পুত্র হাঁটতে হাঁটতে ভাবছে, রোদের প্রখরতায় চারদিকের সবুজকে আরও সবুজ লাগছে। আকাশে তাকানো যাচ্ছে না। কিন্তু একটা কোমল শীতল বাতাস বয়ে যাচ্ছে। ফলে হাঁটতে খারাপ লাগছে না। তার মনে হচ্ছে সে কেমন কবিতার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে। কিন্তু এমন নয় তা অবস্থাটা বদলে দিচ্ছে। একই ঘোর লাগা জনপদ ধরে তারা এগিয়ে যায়ভাইয়ের রোদে পোড়া চেহারায় বর্ষার নদীতে জোয়ারের ঘোলা জলকিন্তু তা তাকে নিরাশ করে না। সে রক্তের ভিতরে এক অদম্য স্রোত অনুভব করে। মাথানিচু করে দরজার সামনে জলচৌকিতে বসে থাকা বৃদ্ধার পুত্র ভাইয়ের উচ্ছ্বল চোখে তাকায়হ্যাঁ, ঘোলাটে জলের বাষ্পে আচ্ছন্ন বলে ঘোলাটেরোদের তীব্রতায়েই এমনটা হয়েছে।  হঠাৎ সে নদীর প্রাঞ্জল ঢেউয়ের জলে কিছু শব্দ জুড়ে দেয়সে বৃদ্ধার পুত্র, ঘরে বেতের চেয়ারে বসে বারবার অন্যদের চাহনি অনুভব করছিলো। তাহলে তুমি আত্মহত্যা করলে?’

নাহ, ব্যর্থ পৃথিবীর আশ্চর্য জ্বরে আক্রান্ত।ভাই উত্তর দেয়।

কিন্তু কীভাবে এমন ধীরে চলা ট্রামের নিচে পড়লে?’

কেনো, পুথিবীর চলনের গতি বুঝো না? মিছিল চলছিলোকেমন আশ্চর্য অন্ধকার চারদিকে ছড়ানো ছিটানোধাক্কাটা সামলানো যায়নি।

কিন্তু ততোদিনে তো মানুষ মহাপৃথিবীর ইতিহাস জেনে গেছেজীবনব্যর্থতাচমৎকারিত্ব।

তবুও কয়দিনহাসপাতালের বেডে ধুঁকে ধুঁকে হলেওসেটা যাপন করা গেছে।

কিন্তু আত্মহত্যার মোটিভ তো এড়ানো যায় না!সে মাঠের ঘাসে রোদের তীব্রতা টেয় পায়, পা ছড়িয়ে বসে। দূরে নদীর পাড়ে একাকি বৃক্ষ বাকশূন্য দাঁড়িয়ে আছেচেয়ে মনে হয়কেমন ভয়ডরহীন।

বৃদ্ধা তার পিতাকে স্বপ্ন দেখেছেন। পিতা তাকে পথের দিকনির্দেশনা দিয়েছেনউপদেশ দিয়ে বলেছেন, এখন তাকে কী করতে হবেসন্তানদের কী বলতে হবে। এবং এটা এবারই প্রথম নয়। কিন্তু কেউ আসলে জানে না, কখন তিনি প্রথম পিতাকে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন। তার আলোকিত শৈশবপিতা তাকে সেখানে বনে জঙ্গলে ঘুরাঘুরি করতে নিষেধ করলেন। তিনি সেখানে ঘুরে ঘুরে চতুর শিয়ালের পাঠশালা খুঁজেছেন। এক অর্থে সেটা কুমিরের ছানা খুঁজে বেড়ানোও।

বৃদ্ধার পুত্রবধু দৃশ্যের বাইরে থেকে দৃশ্যে ঢুকেছে। বড়ছেলের চোখে সুরমার দাগ। সে মায়ের যৌবনের ছবি আকার চেষ্টা করে। প্রথম যেবার বাড়ি ভাঙে, আপনার তা মনে আছে?—তাকে লক্ষ করে সবে দৃশ্যে ঢোকা নারী বলে ওঠে।

এতো সেদিনের ব্যাপার! আরও বড় ভাঙনের কথা মনে আছে।বৃদ্ধার বড় ছেলে বলে ওঠে। তার কথার মধ্যে এক ধরণের ধাঁধা আছে, একইসাথে কণ্ঠস্বর উপহাসে জড়ানো।

তখনও কি মায়ের স্বপ্নের আশির্বাদ ছিলো?’ বৃদ্ধার পুত্রবধু এবার কিছু ক্ষীণ সুরে বলে ওঠে।

আসলে আমরা বহুদিন জানতাম আসলে আমরা কী চেয়েছিলাম। কিন্তু একসময় ভুলে গেছি। কিন্তু আবার একসময় মনে হয়েছে, যা চেয়েছি আসলে তা-ই পেয়েছি। কিন্তু আমার পিতা এটা কখনও মানতে চাননি। এ নিয়ে তার মনে হতাশা ছিলো। একইসাথে স্বপ্নের আভিজাত্যও ছিলো।’—বৃদ্ধার ছেলে মায়ের দিকে তাকায়। মা কখনও অসুখবিসুখে পড়ে না। তার চোখমুখ সর্বদা উজ্বল। কিন্তু তিনি চুপ করেই পান চিবুতে থাকেনকিন্তু বহুবছর আমরা স্বপ্নের কথা কিছুই জানতাম না।

ভাঙনের কারণে তো বহুবার ঘর বদলাতে হয়েছে?’

সময় যতো গেছে আমাদের জন্য দুইটি শব্দ সবচেয়ে বড় সত্য হয়ে উঠেছেপাটনা, ও একঘরে; নদীকে আমরা যতো আঁকড়ে ধরছিলাম, সেটা যেমন আমাদের মেনে নিতে পারছিলো না, সমাজে আমরা মিলে মিশে থাকতে পারছিলাম নাবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছিলাম। আসলে আমার পিতা অনেক কিছু চাননি, যা তাকে ক্রুরভাবে বিচ্ছিন্ন করেছে।

তা কি অভিশাপের মতো সত্য?’ বলেই বৃদ্ধার পুত্রবধূ আবার দৃশ্য থেকে বের হয়ে যেতে চেয়েছে। পুত্রবধুর স্বামী তার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়েছে। এবং আচমকাই সে উঠে দাঁড়িয়েছে। বৃদ্ধা তখন বলে ওঠে, ‘বাড়ির পেছনের যে বড় আমগাছ দুইটি কাটার কথা হয়েছে, তাও কেটে ফেলা হোক।

ছেলে আবার বসে পড়ে। আসলে এটা নিয়ে কেউ তেমন উত্তেজিত নয়। তবে বড় ছেলে মায়ের সাথে গলা মিলিয়েছে। আগে গাছ দুইটা কেটে ফেলা হোক।পরক্ষণেই আবার বলেছে, ‘ওরা দুজনেই বা কোথায় গেলো। কেউ ওদের ডেকে আনুক।

পুত্রবধু দৃশ্যের বাইরে না গিয়ে আবার ভাঙনের কথা তুলেছে। তার স্বামী বালকসুলভ হাসি নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেছে। ভাইদের খুঁজে বের করা চাই। সে রোদে পুড়তে থাকা মাটির রাস্তায় পা ফেললো। তাকে সহজেই চেনা যায়। সুদর্শন তরুণ যতোদিন আগে প্রেমে পড়েছে, এখনও ততোদিন কেটে যায়নি। চোখেমুখে সান্ত্বনা আছে। তা কেবল তার চোখমুখ শান্ত করুণ করেছেশ্যাওলায় পাতি হাঁস শামুক খুঁজছে। আর যেবার একটু আগে আগেই বর্ষা এসেছে, ক্ষেতের ধান পুরোপুরি পাকার আগেই বন্যায় ডুবেছে। তখন সন্ধ্যায় পাতিহাঁস গলা অবধি ধান নিয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছে। আর সেবার একটু আগে আগেই তারা ডিম দিয়েছে।

সে যখন ভাইদের কাছে পৌছে, তখন তারা তিনজন সবুজ মাঠের পথে বসে নদীর পাড়ের গাছের দিকে তাকিয়ে থাকে। একাকী বৃক্ষটি কখন নিজেকে নদীর ঘোলাটে স্রোতে নিক্ষেপ করবে?’ সুদর্শন তরুণ হঠাৎ-ই প্রশ্ন করে। তার চোখে কল্পনা আছেস্মৃতি নেই। সে ভাইদের দিকে তাকায়। যারা দুজনেই নিজ নিজ স্মৃতিতে ঢোকার চেষ্টা করে। তখন নদীর ঘোলাটে ঘুর্ণনে নিজেদেরও নিক্ষেপ করে। কেনো তুমি সযত্নে জীবনকে প্রত্যাখ্যান করছো?’ বৃদ্ধার পুত্র বলে উঠলো। সে খাটের পাশে বেতের চেয়ারে বসে থেকেছেএখন দূরের বাকশূন্য বৃক্ষের দিকে তাকিয়ে রয়েছেগাছটি সংগীতের মুহুর্ত খুঁজছে।

কিন্তু আমি তো জীবনকে প্রত্যাখ্যান করছি না!সে অবাক। তার রোদের পোড়া মুখ ঘামে ভেজারোদের আলোয় সোনালি বিন্দুর মতোকিন্তু তাকে অবহেলা করা যায়।

ভাইদের খুঁজতে আসা তরুণ আবার বলে ওঠে, ‘এটা কী এমনতুমি নিছক জীবনকে পাশে সরিয়ে রেখে এগিয়ে যাচ্ছো?’ তার দৃষ্টিতে ধাঁধার খেলা আছেযতোদিন হলো সে প্রেমে পড়েছে, সবকটি দিন এখনও কেটে যায়নি।

গৌতমের জীবন ইতিহাস পর্যালোচনা করা যেতে পারেপ্রেমকে তিনি প্রত্যাখ্যান করেননি, নতুনভাবে উদ্ভাবন করেছেন।বৃদ্ধার ছেলে ঘাসের ওপর বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। একসময় যখন সে তার দিকে নিক্ষিপ্ত অন্যদের চাহনি অনুভব করেছে, এক বোধের জন্ম হয়েছে।এটা কী এমনসে সবার জন্য কিছু না কিছু করতে পারে? সে-ই কেবল সেই অধিকার প্রাপ্ত!

কিন্তু আমি তো এমনকি জীবনকে এড়িয়ে পর্যন্ত যাচ্ছি না।তার ঘোলা চোখে কেমন অভিমান দানা বাঁধে। যে ঘরে বসে মায়ের দিকে পর্যন্ত তাকাতে পারেনি। বৃদ্ধা যখন কথা বলেছে সে ঘরে মাটির মেঝেতে তাকিয়ে থেকেছে।

কিন্তু তুমি তোমার রূপান্তরের ইতিহাস ভেবে দেখো। মানুষ তো ঠিকই নিজেকে প্রত্যাখ্যানের ভাষা খুঁজে পেয়েছে?’

তাছাড়া শিল্পীর নিজের থেকে বের হয়ে নিজেকে প্রতারণাতাকে তুমি কোন জীবন বলবে?’

কিন্তু আমরা আমাদের সন্তানদেরপুত্রদেরকন্যাদের কীভাবে বাঁচিয়ে রাখবো? জীবনের অভিশাপের শক্তি তোমরা টের পাও না? টের পাও না ওদের জবরদখল আমাদের পিছু ছাড়ছে না? তোমরা হয়তো বুঝো, আগুন যখন জ্বলতে থাকে, তখন তারও এক সান্ত্বনা আছে। কেউ যখন পুড়ে, তারও সান্ত্বনা আছে।

যেটা জীবনকে জীবন করে তোলে। এবং যেভাবে বলো, সেভাবে জীবনের সমাপ্তি টেনে জীবনের অর্থ দান করে।

কিন্তু সমাপ্তি টানার পর কি জীবন থাকে?’ তরুণ সরল হাসি দেয়। সে নতুন ধাঁধা খুঁজে পেয়েছে।

বৃদ্ধার পুত্র উত্তেজিতভাবে ঘাস মাড়িয়ে হাঁটতে থাকে। ভাইদের ঘিরে সে হাঁটতে থাকে। কিন্তু কখনই বৃত্ত পূর্ণ হয় না। তার আগেই সে ফিরে যায়। এটাই হয়তো পুনরাবৃত্তির সীমাবদ্ধতা। এবং তা বিজ্ঞান ও দর্শন দুই ক্ষেত্রেই।

তোমার হৃদয় আজ ঘাসহঠাৎ বৃদ্ধায় ছেলে উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। ভাইদের চাহনি তার উপর নিক্ষিপ্ত হয়। নাহ, ঘরে বসে এই চাহনি সে অনুভব করেনি। তারাও উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। তিনজনের হাসি পুরো মাঠ মাতিয়ে দিগন্তে এগিয়ে যায়। বাড়ির পথে তার প্রতিধ্বনি নামতে থাকে।

বৃদ্ধার বড় ছেলে শান্তভাবে মায়ের সাথে কথা বলতে থাকে। তখন ঘরের দৃশ্যে তাদের ছাড়া আর কেউ নেই। কয়েকবার তার স্ত্রী এসে কথা বলে গেছে। একবার বলে গেছে, মৌচাকের মধু সংগ্রহের সময় হয়েছে। তবে স্ত্রীকে সে তেমন কোনো উত্তর দেয়নি। মাকে সে তার শৈশবের গল্প বলেছে। যে গল্পে বৃদ্ধার পিতা উপস্থিত। সেই চেনা জঙ্গলের পথ ধরে সে গিয়েছে। শিয়াল পণ্ডিতের পাঠশালার খোঁজ তখনও মেলেনি। এই হলো যতো সমস্যা, কুমিরের প্রতিটা ছানা দেখতে একই রকম। হ্যাঁ, একদিন তার সব স্বপ্ন সত্য হবে।বৃদ্ধা চিৎকারের ভঙ্গি করে।

তবে বৃদ্ধার বড় ছেলে শান্তই থাকে। বৃদ্ধা বলে, ‘যেবার পদ্মায় চর জাগলো, পিতার জায়গা দেখিয়ে বললেন, ঐখানে তোমার ঘর করো? সেবার এক বিল পদ্ম তুলে ভেলায় ভাসিয়ে দিলাম।

পুত্র সেই স্মৃতি স্মরণ করতে পারে। তিনি বললেন, দেখো, একদিন সবকিছু তোমার মতো করে চলবে?’ বৃদ্ধার চোখদুটি জ্বলজ্বল করে। ভাঙনের ফলে পাটনার পর পাটনায় যেনো আমাদের ভিন্ন ভিন্ন রূপ।

মা, এখানে কেউ নেই, আপনার আদেশ অমান্য করবে।বৃদ্ধার বড়ছেলে বেশ উত্তেজিতভাবে বলে ওঠে।

পিতা সোনালি দিনের কথা বলেন। সেই ঘূর্ণিঝড়ের দৃশ্য এখনও আমার চোখে ভাসেঘরগুলো উড়ে গেলে আমি ছেলেকে আঁচলে লুকিয়ে ঝড়ের বাতাসে উড়েছি। সে ঝড়ের বাতাসে সোনালি দিনের স্বপ্ন আমাদের  আরও পোক্ত হয়েছে।

পুত্র সেই ঝড়ের কথাও মনে করতে পারে। বেশ স্পষ্টভাবে তার কাছে ঘুর্ণিঝড় আছে। তবে এখন সে আর মায়ের কাছে সোনালি দিনের অর্থ খোঁজে না। কিন্তু আমরা নিজেদের প্রতারণা করেছি।হঠাৎ অস্বস্তিকরভাবে সে বলে ওঠে। কিন্তু মায়ের দিকে তাকিয়ে কিছুটা স্বস্তি পায়। বৃদ্ধা তার স্বপ্নে মশগুল। সে পুত্রের দিকে তাকায় না। ফলে বৃদ্ধার বড় ছেলে মায়ের চোখে জ্বলতে থাকা সান্ত্বনায় তাকিয়ে থাকে। কিন্তু আমরা কীভাবে আমাদের সন্তানদের রক্ষা করবো?’ সে নিজের মধ্যে একটা ক্রোধ অনুভব করে। কিন্তু নিজেকে মায়ের স্নেহের সান্ত্বনায় ডুবিয়ে দেয়, ভাসতে থাকে।

ধুপ-ধাপ-ঝন, ঝন্-ঝন্-ধুপ-ধাপ, ধুপ-ধুপ্শব্দগুলো বাতাসকে কেমন অসহায় করে তুলেছে। এর থেকে হয়তো মেশিগানের শব্দও ভালো। কিন্তু আসলে নিস্তব্ধতা শব্দগুলোকে অসহনীয় করে তুলেছে। বৃদ্ধা কথা বলা থামিয়ে দিয়েছে। তার বড়ছেলে আর কথা বলতে পারছে না। অন্য কেউ কাছাকাছি নেই। তাদের একা ছেড়ে দূরে চলে গেছে। যেন মা-ছেলের জন্য তারা সময়টা ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু ছেলে ভেবে পাচ্ছে, সময়টা আসলে তাদের হয়নি। তাছাড়া সোনালি দিনের নির্লপ্ততা আছেস্বপ্ন থেকে উঠে এসেছে। সে সেখানে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছে না। কেমন একঘরে বিচ্ছিন্ন লাগছে। তাছাড়া মা স্বপ্নের আশা দেখালেও কেমন করুণ তীক্ষ্ণ ভয় ছড়ায়েছে। সেটা যেনো তার উপরে চেপে বসছে। সে বসে বসে দুলছে আর ভাবছেকেউ আসুক। তাদের দৃশ্যে নতুন কেউ আসুক। অন্য কেউ আসুক। তার ভাইয়েরা বা তার প্রাণপ্রিয় স্ত্রী। যাকে ভালোবাসার সাথে সাথে সে শ্রদ্ধাও করে। কিন্তু কাউকে ডাকার মতো শব্দ পাচ্ছে না। কেবল ধুপ-ধাপ-ঝন, ঝন্-ঝন্-ধুপ-ধাপ, ধুপ-ধুপ্শব্দের ঘোর লেগে রয়েছে।

জ্যোৎস্নার মতো কচুরিফুলের তেমন ঘ্রাণ নেইকেবল নির্লিপ্ত মায়া লেগে আছে। সকালের আগুন জ্বললে কমলি ফুলকে জাগতে দিনরাতে কেউ ভেলায় করে প্রদীপ ভাসিয়েছিলো। ভেলা ভাসতে ভাসতে সকালে অচেনা পুকুরের ধারে আগুন জ্বালিয়েছে। তবে এখন আর আগুন নেইতারা ঘাসফুলে ঘ্রাণ দিয়েছে। তা এখন বাতাসে ভাসছে। আগুন নিয়ে মানুষ উত্তেজনা বোধ করলেও সেই উত্তেজনা বেশিক্ষণ টেকেনি। এ নিয়ে কেউ কাউকে অভিযোগ করেনি। তবে ঘ্রাণটা সবাই উপভোগ করছে। ভাইদের ফিরে আসার পথ ধরে ঘ্রাণটা তীব্র। তিন ভাই হাঁটতে হাঁটতে কেমন ক্লান্তি অনুভব করে। এখন ভেলাটি কমলিফুলের গা ঘেঁষে আছেআসলে আমাদের অনুভূতি বোধ অনেক বেশি মিশ্র প্রকৃতির।  এবং আমরা জানি না, কী কখন আমাদের ওপর চেপে বসেছেকখন কী আমাদের ওপর চেপে বসে।বৃদ্ধার ছেলে পুকুরের ধারের পোড়া ছাইয়ের ওপর এসে দাঁড়ায়। ছাই হাতে নিয়ে দুহাতে মাখেঘ্রাণ বুঝার চেষ্টা করে। সে নিজেদের ফিরে যাওয়া রুখে দেয়। কিন্তু এখন কবিতা তার কাছে কতোটা শুদ্ধ খাঁটি? ট্রেনের কয়লা পোড়ার ঘ্রাণস্টীমারের হুইসেলের শব্দমায়ের ডাকধীরে ধীরে একে অন্যের সাথে মিশে যায়। একটি কাক পোড়া কমলির ডালে এসে বসে। সে তার দিকে তাকিয়ে কোনো চাহনি অনুভব করে নাবেজায় নির্লিপ্তকিন্তু ঘরে অন্যদের চাহনি মোটেই অচেনা ছিলো না। আমরা আসলেই কি তা-ই যা হয়ে উঠেছি? –কিন্তু আমরা কী হয়ে উঠতাম? কী হয়ে উঠতে চেয়েছি? মুক্তি হয়তো চেয়েছিকিন্তু সেই মুক্তির অর্থ কী?’ পোড়া ভেলা আবার যেনো গতি পায়সে ফুলকে অনেক ঘ্রাণ বিলিয়েছে। তবে বৃদ্ধার ছেলে কমলিফুলের এক নিজস্ব ঘ্রাণ মনে করতে পারেকিন্তু তা কবে আরও অর্থপূর্ণ হবে? পূর্ণতা পাবে?’ বৃদ্ধার ছেলে অনেকটা চিৎকার করে ওঠে। ভাইয়েরা বেশ অস্বস্তি নিয়ে তার দিকে তাকায়।

আসলে বাস্তবতা অনেক ভিন্ন।

কিন্তু আমরা কল্পনাপ্রিয়

ফলে আমাদের আসলে সৎ ও সত্য অস্তিত্ব সম্পর্কে অনুভূতি নেই। একঅর্থে ধারণা নেই। যা আমাদের সবচেয়ে নির্লিপ্ত করে তোলে। অসহায়ও

অবশ্য আমাদের অসহায়তাও অনেক বেশি আত্মকেন্দ্রিক। কেমন অবাস্তববিব্রত কিন্তু বিমূর্ত।

কেউ আসলে বুঝছে না তারা কী বুঝাতে চাচ্ছে। কিন্তু তাদের নিজস্ব ব্যাখ্যাকে তারা রুখতে পারছে না। এমন যে আসলে তারা কিছু বলছে না। কেউ তাদের দিয়ে বলিয়ে নিচ্ছে।

এটা কী এমনআমরা অনেক বেশি অস্তিত্বহীন।বৃদ্ধার তরুণ সুদর্শন ছেলে নতুন ধাঁধা খুঁজে পায়। সে আসলে বিব্রত নয়। সে যতোদিন হলো প্রেমে পড়েছে, ততোদিন এখনো কেটে যায়নি। তাছাড়া সে সেই অর্থে ভাগ-ভাঙন কিছুই দেখেনিযুদ্ধের আগুনের ছাই হাতে ছুয়ে দেখেনি। সে যতোদিন মাতৃস্তন পানে অভ্যস্ত ছিলোমা কখনও তাকে এড়িয়ে যায়নিতার স্মৃতি তাকে প্রতারণা করেমাতৃস্তনের ঘ্রাণের সাথে সাথে অন্য সকল বাস্তবতাও হারিয়ে যায়।

আমাদের অস্তিত্ব হয়তো সেটা যা আমাদের বিচ্ছিন্ন করেএকঘরে করে তোলে।

কিন্তু সেটাই তো বাস্তবতা নয়এমনকি স্বাভাবিক জীবনও নয়।

ভাবতে পারো নদীভাঙন কী? সহজ ও বিপন্ন সরলতা যা নিয়তির মতো আমাদের আঁকড়ে রাখে।

এটা কি নিছক পিতার ভুল ব্যাখ্যা নয়? যা এখানে বলা হচ্ছে, এমন কি নয়তা কেবল তাকে অ্যাবসার্ড করে তুলছে?’

তা হয়তো সত্য। কিন্তু তা এড়ানো তো বাস্তবতা হয়ে উঠছে না।

তার কারণ হয়তো বাস্তবতার বহু খাঁদ। অতলস্পর্শীপাতালের এলোমেলো পথ চিন্তা করতে পারোযে পথ ধরে মনসা নাগালয়ে গিয়েছিলেন।

উঠান পেড়িয়েই রান্না ঘর। সেখানে থেকে আগুনে পাটখড়ি পোড়ার শব্দ আসছেবৃদ্ধার পুত্রবধূ রান্না করছে। বৃদ্ধার অন্য এক ছেলের স্ত্রী একবার উঁকি দিয়ে গেছে। সে ঘরে বেতের চেয়ারের পাশে খাটে বসা ছিলো। তার দৃষ্টি অচেনা, তবে একধরণের সমুদ্রমন্থন তার চোখে আছে। হ্যাঁ, এবার হয়তো অমৃত উৎপন্ন হবে। ফলে তার কাছে সবকিছুই কেমন উপভোগ্য মনে হচ্ছে। তবে রান্নারত নারী স্বামীর পেছনে মুখে অর্ধআঁচল দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। তার চোখের নিচে কালো কালো দাগমোটেই অচেনা না। থুতনিতে কাটা দাগস্বামীকে একবার তার কান্নারত মুখের দিকে হ্যারিকেন ছুঁড়ে মারতে হয়েছিলোসেই কান্নারত মুখের দৃশ্যও অচেনা নয়। বৃদ্ধার পুত্রবধু যখন রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে অচেনা দৃষ্টি হেনেছে, তখন সেই কান্নাভেজা মুখই তার চোখে পড়েছে। সে বলে উঠেছে, ‘স্বামী সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নারীকে কিন্তু একটু চতুর হতেই হয়, তা বদনাম হলেও। বদনামকে ভয় পেলে চলে না।

বদনাম কিন্তু আপন মানুষেরাই করে।চুলার পাটখড়ি দিতে দিতে বৃদ্ধার পুত্রবধু বলে ওঠে।

আসলে কাছের মানুষেরা কেবল বদনামের সুযোগটা নেয়। এটাও তারা তাদের পরিবারের জন্য করে।বৃদ্ধার পুত্রবধু বেশ আগ্রহের সাথে বলে।

হ্যাঁ। সেবার বিলে প্রচুর পদ্ম ফুটলো। আমরা ভাবলাম, এইও বুঝি আমাদের সুখের তারা ফুটলো।তার চোখে আগুন জ্বলছে। কিন্তু চুলার হাড়ির পানি পড়ে চুলার আগুন নিভে যাওয়ার সে পাটখড়ি দিয়ে তাতে ফুঁ দিলো। আবার আগুন জ্বলে উঠলো।

পরে বুঝলে, সেটা কেবল কল্পনা!

আসলে বিলে পদ্ম ছিলো না, আকাশে তারাও ছিলো না। চারদিকে অথৈ জলআমরা ভেলায় করে জ্যোৎস্না বিহারে গেলাম। এখনও বেঁচে আছি এই ভেবে যে, ক্ষণকালের মধ্যেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছিলো।

কিন্তু এই বেঁচে থাকাকে কি বেঁচে থাকা বলে? যেনো সন্ধ্যায় পাখা গজিয়েছিলোসারারাত আলোর মন্থনে থেকে সকালে পাখাহীন পলায়নপর রাণী উইপোকা!

হ্যাঁ, সেদিন পুরোটা বিকেল বৃষ্টি ঝরেছিলো।

কিন্তু উইয়ের ঢিবিরও তো খোঁজ নেয়া চাই?’

আর আমরা কিনা সকাল সকাল দইচিড়া খেতে মশগুল!বৃদ্ধার পুত্রবধু ধবধবে সাদা ভাত হাতে নিয়ে দেখে সিদ্ধ হয়েছে কিনা। তখন বৃদ্ধার পুত্রবধু বিদায় নেয়স্বামীর ফিরে আসার আওয়াজ শুনতে পায়। আমাদের হয়তো কলার ভেলায় অথৈ সাগরে ভাসতে হবে। তবুও যদি রাগ ভৈরবের দেখা পাই!উঠান বরাবর হাঁটতে হাঁটতে সে শুনতে পায়।

ফিরে তারা আবার মায়ের কাছে গিয়ে বসে। বৃদ্ধার পুত্রবধুও তাদের সাথে যোগ দেয়। কিন্তু বৃদ্ধা চুপ করে থাকে। ফলে পুত্ররাও তাদের ভাষা হারায়। বাড়ির পিছনে বাঁশঝাড়। সেখান থেকে শুঁকনো পাতার শব্দ তাদের কাছে আসছে। তারা সকলে মনোযোগ দিয়ে শব্দটা শুনছে। কেউ শুঁকনো পাতাগুলোকে ঝাড়ু দিয়ে এক জায়গায় জড়ো করছে। তারপর পাটের বস্তার মধ্যে ভরছে। ফলে শব্দের মূল সুর এক হলেও ক্ষণে ক্ষণে শব্দ বদলাচ্ছে। এবং তা ক্ষণে ক্ষণে সবার চেতনাকে বদলাচ্ছে। তখন তারা এক অন্যের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে। কিন্তু কিছু বলছে না।

সবাইকে অবাক করে বৃদ্ধা এক সময় ঘর থেকে বের হয়ে গেছে। পুত্রবধুকে ডেকে গোছলের জল চেয়েছে। বাঁশঝাড়ের নিচ থেকে বৃদ্ধার বড় ছেলের স্ত্রী পাটের বস্তা টানতে টানতে ফিরেছে। কিন্তু ঘরে ঢুকেনি, কেবল উঁকি দিয়েছে। ঘরে তখনও পাঁচজন  নরনারী নির্বাক বসে আছে। কেবল দৃশ্য থেকে নয়, বৃদ্ধা ধীরে ধীরে দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যায়। একসময় বৃদ্ধার ছেলে কথা বলে ওঠে। কয়েকটা ছেলেমেয়ে দৃশ্যে ফিরে আসে। মাটির রঙে গায়ের রংসকলের বয়স-ই দশ এর মধ্যে। তারা দৃশ্যে ঢুকে এক এক কোণায় স্থান দখল করে। তাহলে আমাদের আর কোনো উপায় নেই। বৃদ্ধার ছেলেকে বেশ ক্লান্ত লাগে। তার রোদে খয়েরি রঙ ধারণ করা মুখে স্পষ্ট-ই ক্লান্তির ছাপ। কপালের ঘামে হাত দেয়। বর্ষার কর্দমাক্ত রাস্তায় লেগে থাকা জোকের মতো মনে হয়। সবাই তার দিকে তাকায়। কিন্তু সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নেই। কেমন অস্বস্তিবোধ করে।

উপায় নেইতাতো মা বলছে না। আসলে উপায় না থাকাটাই উপায়। মায়ের পিতার স্বপ্নই আসলে একমাত্র সত্য আদর্শবৃদ্ধার বড় ছেলে বলে ওঠে। তাকে বেশ তৃপ্ত লাগে। পানে তার ঠোঁট লাল হয়েছে। আবার ঠোঁটের কোণে সাদা চুন লেগে আছে।

আসলে এ থেকে রক্ষার উপায় নেই। কেবল তা না। রক্ষা না করাই আসলে রক্ষা। বৃদ্ধার পুত্রবধুর কণ্ঠস্বর রহস্যময় লাগে। তার দিকে তাকিয়ে কেউ চেনে না। এমনকি তার স্বামীও না। কিন্তু স্বামীর হাতে হাত রেখে সে স্বামীকে আশ্বস্ত করে। বুঝায়, সে আসলে জানে সে কী করছে। এটা হলোনিজেদের পাতালের অতল-গহ্বরে ছেড়ে দেয়া। তা রুখতে যাবার মতো নিঃসঙ্গতা আর নেই। যেন চিরন্তন নৈরাশ্যযার থেকে কোনো রক্ষা থাকবে না।

সবার মুখে কেমন একটা স্বস্তির ছায়া পড়ে। কেউ ঠিক বুঝে না, কেনো। কিন্তু সবাই সময়টাকে কেমন উপভোগ করে। উত্তরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। তাদের কাছে কেবল শান্ত শীতল বাতাস আসছে। কিন্তু তারা একইসাথে অনুভব করে ঝড় আসলে তাদের কাছেও আসছে। যেন নির্লিপ্তভাবে ধ্বংসের প্রতিক্ষা করা। আর সেই প্রতিক্ষার মধ্যে কাব্যিক সুগন্ধ আছে। এক ধীর সুস্থ সরলতা আছেযা উন্মাদ অর্থের অতি নিকটেসবচেয়ে আদিম উন্মাদ মূর্খতা থেকে উদ্ভূত।

আসলে সত্য হলো এটা যে, বেঁচে থাকার প্রতিটা মুহুর্তকে সেই প্রতীক্ষার সচেতনতা বুঝানো।সবাই এবার বৃদ্ধার পুত্রবধুর দিকে তাকায়। মিথ্যা কিন্তু মিথ্যা না, যখন তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়।সে এবার পূর্ণভাবে দৃশ্যের মধ্যে বর্তমান। তার সুদর্শন স্বামী তার দিকে তাকিয়ে অস্বস্তিকর হাসি দেয়। কিন্তু সে নিছক স্বামীর দিকে একটা ধাঁধা ছুঁড়ে দেয়। ধাঁধা সুদর্শন যুবক পছন্দ করে।

যখন আমাদের উপায়হীনতাই উপায়, তখন অসহায়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে সোনালি আদর্শ হতে থাকে। এবং মায়ের পিতার স্বপ্নের মতোই সত্য হয়। যখন সত্য আদর্শের সত্য, তখন তার থেকে শক্তিশালী কিছু নেই।বৃদ্ধায় বড় ছেলে যখন আবার কথা বলে, তখন তাকে সুপ্রাচীন কোনো সাধুঋষির মতো লাগে। আদিম সুস্থ সরল উন্মাদএবং তাকে সহজেই চেনা যায়। চেনা জনপদের মতো চেনা। ভোরের দোয়েল এসে শিস দেয়। কুমড়ো ফুলের ঘ্রাণে বিকেল জ্ঞান হারায়। উত্তরের গভীর কালো মেঘ বাঁশঝাড়ে আঘাত করে। রাত নেমে আসে।

বৃদ্ধার পুত্র ঘর থেকে বের হয়ে যায়। রান্নাঘরে গিয়ে রান্নারত স্ত্রীর দিকে তাকায়। স্ত্রী তার দৃষ্টি স্পষ্টভাবেই পড়তে পারে। সে চোখ নামিয়ে নেয়। রান্না প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। সে জানে এখন তাকে কী করতে হবে। তার বাচ্চা ছেলে মেয়েরা কলাগাছ কাটছে। তার স্বামীর উচিৎ ছিলো এতক্ষণে কয়েকটা বাঁশ কেটে ফেলা। বাঁশের মাচাও দরকার। তাছাড়া যদি একটি ছাওনি দেয়া যায়, হয়তো রোদবৃষ্টি থেকে বাঁচা যাবে। স্বামীর দিকে তাকিয়ে তার বিরক্তি লাগে। কিন্তু প্রকাশ করতে পারে না। তবে স্বামী হঠাৎ দা খুঁজে নিয়ে বাঁশঝাড়ের দিকে যায়।

কিন্তু আমরা আমাদের সন্তানদের কীভাবে বাঁচিয়ে রাখবো?’ বৃদ্ধার পুত্রবধুর কণ্ঠস্বর চেনা হতে থাকে।

মায়ের স্বপ্নের আভিশাপের অস্তিত্ব সরল পথেই এগোয়। সেখানে একইরকম উপায় নেই-বন্দিত্ব বর্তমান।বৃদ্ধার ছেলে স্ত্রীর হাত চাপ দেয়।

কিন্তু ভাগবাটোয়ারা যেনো ঠিকভাবে হয়এই হলো আসল কথাবৃদ্ধার পুত্রবধু বলে ওঠে। আবার হঠাৎ সে দৃশ্যের বাইরে গিয়ে বারান্দার খাটে বসে। আর স্নেহের ভাগটাই সবচেয়ে সুষ্ঠ ভাগ।নিজেকে একেবারে আড়াল করে। কণ্ঠস্বরের অনিশ্চয়তার ভীতি দ্বারা সে নিজেকে আড়াল করে। তার স্বামী আরও সরল হতে চায়। আকাশে তাকিয়ে এমন কোনো সৃষ্টির কথা চিন্তা করে, যারা আগুনের তৈরি। তারা আগুন ভেদ করে তার দিকে তাকায় ও অস্তিত্বের আশ্বাস দেয়। আমি আরও কতোদিন এমন তরুণ সুদর্শন থাকবো?’ তার মুখ থেকে কোনো আওয়াজ বের হয় না। হ্যাঁ, সে অনস্তিত্বের স্পষ্ট অস্তিত্ব ধরতে পারেএকদিন সে আবার প্রেমে পড়বে। এবং সেটাই তার অভিশপ্ত নিয়তি হয়ে দাঁড়াবে। গাজার শুদ্ধ ঘ্রাণে নির্লিপ্ত থাকাবদ্ধ ঘরে জলের ঘ্রাণের মতো স্যাঁতস্যাঁতেতার তারুণ্যের স্মৃতি সংরক্ষণ করে। পিতাকে যখন মনে পড়েপ্রথম প্রেমের মতো অচেনা অস্পষ্ট লাগেহুকোর ধুঁয়ায় মিলিয়ে যেতে থাকে।

বৃদ্ধার পিতা স্বপ্নে কী বলেছেন? –ভাঙণ রুখে দেবার শক্তি যেহেতু আমাদের নেই, আমরা ভাঙনকে একমাত্র সত্য মেনে এগিয়ে নিতে পারি। এবং যেটা সুপ্রাচীন কাল থেকে সত্য হয়ে এসেছে। অবশ্য বৃদ্ধা নিজেও আদিম কোন শহরের অস্তিত্ব অনুভব করে এসেছেন। এখন তা এতো অতীতে যে, পাতালের মতো লাগে। এবং পাতালের গহ্বর থেকে স্মৃতির ধনুক ওড়েতাকে বিদ্ধ করে। তখন তিনি মনে করতে পারেন, সেই শোকের অস্তিত্ব পিতার কর্তৃক প্রসারিত হয়েছে। তা তাকে আরও অতীতে নিয়ে যায়। যেখানে প্রত্যাখ্যানের ইতিহাস স্পষ্ট। নিজের অস্তিত্বকে তিনি ভূলুণ্ঠিত হতে দেখেন। নিজেকে তিনি লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত হতে দেখেন। কিন্তু একইসাথে পিতা কর্তৃক তার অসহায়তা ও অভিশপ্ত অস্তিত্ব প্রকাশ পায়। যা তাকে ভবিতব্যের নিয়তির দিকে নিয়ে যায়এক সোনালি দিনের ভবিষ্যৎ ব্যাখ্যা করেএক চিরন্তন সুখ-সমৃদ্ধির অবস্থাযা তাকে এক ও অনন্য ক্ষমতার অধিকারী করে। এবং এক নিরন্তর রাগ ভৈরবী যার জন্য পিতা অপেক্ষা করছেন। যখন নৃত্যের তালে তালে পৃথিবী তার আপন ছন্দ ফিরে পাবে। এক আপন লয়ঘাসের ওপর সোনালি শৈশবমেঘ নীলের রাজত্বে ভেসে বেড়ায়।

কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে ভাগ সুষ্ঠ হতে পারে?’ বৃদ্ধার পুত্র বলে ওঠে। সবাই আবার তার দিকে তাকায়। অবশ্য সেটা স্বপ্নের ভবিতব্যের ব্যাপারএখন আমরা তা বিচার করতে পারবো না। তাছাড়া আমাদের ওপর সেই বিচারের অধিকার নেইও।বৃদ্ধার কণ্ঠস্বরে জড়তা আছে। তাকে ঠিক কতোবার চেনানো যায়? শব্দের উচ্চতা ঠিক যুদ্ধের ভাষণের মতো নয়। কিন্তু ঠিকই ঝড়ের মাত্রা ধারণের ক্ষমতা নিয়ে বাঁচে।

আসলে এখানে মায়ের আদেশ অমান্য করার সুযোগ আমাদের নেইবৃদ্ধার বড় ছেলে বলে। মা হলো মাটি-দেশ-অস্তিত্বের ধারক। তাছাড়া আমাদের আদিম স্মৃতি অনুবাদ করে দেখতে পারো, মায়ের শোকগাঁথা-ব্যাথা স্পষ্ট হবে। কীভাবে তুমি তোমার ধারককে অমান্য করবে?’

কিন্তু মায়ের যে ঘোর লাগা স্বপ্ন...বৃদ্ধার ছেলে তার প্রশ্ন শেষ করতে পারে না। সবার দিক থেকেই বাঁধা পায়। সে ধাঁধার খোঁজে ছিলো।

মায়ের পিতার স্বপ্ন হলো আমাদের ভবিষ্যৎ। এমনকি মা যেভাবে বলেন, তাঁকে ছাড়া আমাদের বর্তমান অস্তিত্বই অসম্ভব হতো। তিনি মাতাকে প্রতিটা পদক্ষেপে পথ দেখিয়েছেন।বৃদ্ধার বড় ছেলে জোর দিয়ে বলে। তার কথা অন্যদের সরল করে। আর কেউ প্রশ্ন করে না।

আমরা মাঠের ঘাসে বসে নদীর দিকে তাকিয়ে থেকেছি। নদীর বুকে উত্তাল ঢেউ নেই। শান্ত নদীর জলে চাইলেই এখন ভেলা ভাসানো যায়। তবে আমরা জানি, যেকোনো মুহুর্তেই বাতাস শুরু হতে পারে, তারপর ঝড়  শুরু হতে পারে। কিন্তু তা নিয়ে ভয় পাবার তো তেমন সুযোগ নেই!বৃদ্ধার ছেলে এমনভাবে কথা বলে যেনো কবিতা পড়ছেন। তার কণ্ঠস্বর সরল ও নির্লিপ্তকোনো খাঁদ নেই। সে ভাবছেএকদিন ঠিক-ই নদীর পাড়ের একাকি গাছটির প্রতিক্ষা ফুরাবে। সে তার সংগীত খুঁজে পাবেকেবল আমরাই কি পাবো না? ‘রাতে নদীর বুকে আগুন জ্বলেছে। সকালে শিশিরে ভেজা ছাই ওড়ার অপেক্ষায় সময় গুণেছে। মানুষও গুণে গুণে তার সময় শেষ করে। পৃথিবীর সব মানুষ গুণতে শুরু করলে, পৃথিবীরও সময় শেষ হবে। হয়তো এখন তারা গুনতে শুরু করেছে। হয়তো এখন তারা গুনতে শুরু করবে। হয়তো এখন তারা নির্লিপ্ত বন্দিত্বে গুনে চলেছে।

বৃদ্ধার ছেলে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভেলায় চেপে বসেছে। এখন তাকে কেবল দৃশ্যের বাইরে না, গল্পেরও বাইরে মনে হয়। এমনকি তাত্ত্বিক সীমাবদ্ধতাও উৎরে যেতে পারে না। সে দুহাতের তালু এক করে। জল নিয়ে চোখে মুখে মারে। নদীর ঘোলাটে জলের মতো চোখ ধীরে ধীরে সতেজ ও সফেদ হতে থাকে। শরীর ঠাণ্ডা হতে থাকে। সে তার হাত মুঠো করে। ভেলা চলা শুরু করে। সে যেনো তার সব শক্তি হাতের মুঠোয় দিয়ে দেয়। দাঁতে দাঁত কাটার শব্দ হয়। ভেলার গতি বাড়ে। বৃদ্ধার ছেলের বাঁশের মাচায় গা এলিয়ে দেয়। শরীর চোখ মুখ শক্ত হতে থাকেচাহনি স্পষ্ট হয়এক আকাশে থেমে যায়।

ভেলা চলতে থাকে। নদীর পাড়ে একা দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষ তার সঙ্গীতের অপেক্ষায় থাকে। বৃদ্ধার পুত্রবধু বলে, ‘স্বামী সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নারীর করা কোনো পাপ-ই পাপ না। এবং সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে চতুরতার পরিচয় দিতে হবে।সে যেনো অনুভব করে, এটা নিয়তি নয়, ভিন্ন কিছুযা সচেতনভাবে তাকে পথ দেখাচ্ছেযেন আদিম সময় থেকে, প্রস্তরযুগ থেকে এগিয়ে চলা জনপদযার ওপর দিয়ে সে কেবল বয়ে চলছে নাসেও সেই জনপদ হয়ে উঠছে। হ্যাঁ, আমরা সংগীতের অপেক্ষা করছি, সংগীতের অপেক্ষায় করবো।সে সন্তানদের বুঝায়। বৃদ্ধার স্বপ্ন তাদের পথ দেখিয়েছে। তাদের কেবল তা খুঁজে পেতে হবে, যা তাদের দরকার। এবং সে সেই ধাঁধার উত্তর জানে। রাতের গভীরে পুকুরের জলে আগুন লাগার মুহুর্ত থেকে সে তা জানে। এবং তারপর থেকে যা ঘটেছে, তা কেবল ঘটেনি, পুনরাবৃত্তির দৃশ্যায়ন হয়েছে। তারপর এই ভেলায় ভেসে বেড়ানোএও যেনো অভিনয় চলছে। নাটকের দৃশ্যের পর দৃশ্যের টুকরোযা পুনরাবৃত্তির সূত্র ধরে এগোচ্ছে। এবং তা পরিবর্তনের আলো চেনে। যাতে বৃদ্ধার পুত্রের মুখ স্পষ্ট হচ্ছে। তার সন্তানের ভিন্নতা দেখা যাচ্ছেআর বৃদ্ধার পুত্রের মুখের শীতলতা সবাই অনুভব করছেতার স্ত্রীতার সন্তানেরা। এবং তাদের চাহনিতে তার ভীতির রেখা আঁকা হচ্ছে। তাতে এক ধরণের শক্তি আছেএকটা গতি আছে। তাতে ভেলার চলার গতি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।

দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পর ক্লান্তির ছায়া নামতে নামতে বিকেল হয়। বৃদ্ধার কন্যা তার শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরে আসে। সে মায়ের কাছে যায়। বৃদ্ধা তার হাতে মেয়ের হাত নেয়। কিন্তু কোনো কথা বলে না। মেয়ে আবার গিয়ে খাটে বসে। বৃদ্ধা সকালের মতোই একই নিচু খাটে বসেছে। তার পুত্ররা ও পুত্রবধুরা নিজ নিজ জায়গায় বসেছে। বৃদ্ধার পুত্র দরোজার সামনে জলচৌকিতে একইভাবে মাথানিচু করে বসেছে। তবে কেউ কিছু বলছে না। সবাই এবার দক্ষিনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। তারা চুপচাপ অনেকটা নিশ্চিন্ত মনে বাইরে তাকিয়ে আছে। খাবার সময় সবাই বৃদ্ধার কাছে এই আর্জি জানিয়েছিলো, জমি ভাগ নিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া চাই। কিন্তু এখন এ নিয়ে আর কোনো কথা হয়নি। বৃদ্ধা কোনো উত্তর দেননি। কিন্তু সবাই টের পাচ্ছে, তারা নিশ্চিন্ত মনে দূরে দিগন্তে তাকিয়ে থাকতে পারে। সেখানে নদীর শান্ত প্রশস্তিগাঁথা আকাশে মিশেছে। তারা জানে সেখানে সোনালি হলুদ আলোয় কী জ্বলজ্বল করছে। তার জন্য তারা কেবল অপেক্ষা করছে না, সৃষ্টি করছে। সবাই এক আবেশে জড়িয়েছেতা তাদের মায়ের উদ্ভাবন। মায়ের স্বপ্নের উদ্ভাবন। এখন তারা কেবল সেটা উদযাপন করতে পারে। কিন্তু অপূর্ব আবেগে তাদের নড়ার শক্তি নেই। তারা আসলে ভাবতে পারছে না। তারা এমনকি উদযাপনটা অনুভব করছে। অনুভূতির প্রকাশের এক আশ্চর্য উদ্মাদনা তাদের হৃদয়ে ঢেউ তুলছে। কিন্তু জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকা ছাড়া তারা আর কিছুই করতে পারছে না।

এভাবে সন্ধ্যা হয়। রাত নেমে আসে। চৈত্রসংক্রান্তির রাতের অন্ধকার ভেদ করে সবাই দিগন্তে তাকিয়ে থাকে। তারা সবাই নিশ্চিত জানে তারা কী দেখতে পাচ্ছে। তাত্ত্বিক সূত্রানুযায়ী তা তাদের সামনে ভাসছে। যা তাদের চোখ সরাতে দিচ্ছে না।

২১৪২০, ঢাকা।

No comments:

Post a Comment