বাক্‌ ১৪৫ ।। স্বপ্না বন্দ্যোপাধ্যায়

 

 

দুঃখকথা

 

নির্জন ছিলো তার মন

চুলের রেশম থেকে উড়ে যেতো কাক

অথবা আরও কালো কোনো ছায়া

চোখ বা চোখের ধরণ চামচের রুপো

 

এমন মেয়ের কাছে সঁপে দিতে পারোনি নিজেকে

এ তোমার নয় মেয়েটির দোষ

তার ভুল বারবার চাওয়ার কোণ খুঁজে

তোমার বুকের কাছে লুটিয়ে থাকাটা

রূপের কাঁথাটি যার আগুন হয়েছে

তুমি ছাড়া দরজায় আর কোন বিশ্বাস আসেনি তার

 

একদিন দুপুরের পাপড়িতে টোল পড়ে জল

উঠলো মেয়ে নামলো সে জলে

না পাওয়ার ডুবটুকু ধরে তার পাড়ি শেষ হলো

বলো অপরাধ কার?

এখন নিজের কাছে নিজে এসে বসো

কিছুটা সময় দাও নিজের ছায়াকে

যা কিছু ফেলে গেছে সে চাপা শ্বাস নোনাদিঘি

দিন দিন ক্লান্তির ছাপ মুখের বেসন

কুড়োও আর ছুঁড়ে দাও দুঃখগভীর

 

 

পাপ

 

ফনা লুকিয়ে রেখেছিলো সকালের ঘুম

বেলা বাড়তেই মেললো খড়মছাপ

আঁশগন্ধ বাঁশের ঝুড়িতে গোল কালো

আর ব্রণদাগ মাংসের ওপর পলকে

 

চশমার অভ্রতে জমা আছে ঠোঁটের দীঘল

নরম লকেট যার সোয়েটার পকেট

উপচে বেবি টেডিবিয়ার

টমেটো টমেটো রঙ গালের দোপাট্টা

 

দেওয়ালে স্টিকার আঁটা ওয়াইন বোতল

তার নিচে খাট আর র‍্যাবিট কেইজ

সন্ধে বাড়তে আবার ফনাটির ঝাঁপ খোলে

পায়রা শিকার শেষে খাট বেয়ে উঠে

ওয়াইন কাচ থেকে ফালাকাটা জিভ তুলে

র‍্যাবিটের গতি ও জন্মদিনের বয়স চেটে নেয়

 

 

 

বিষ

 

১।

ব্যাঙের ছাতার গায়ে গজিয়ে ওঠা শহর

জানলায় ফার্ণের শুঁড় বেয়ে শুঁয়োপোকা রোম

খাবারে থালাতে ভাত জল সেদ্ধআলুর দানা

মিশে পচে সবুজ থকথকে ঘন রস

আসনের ছেঁড়ায় কল্কা ঘোমটা টুকরোর পিঠে

অন্ধকারে মাকড়সার শিল্পও সুতোগুছি হয়

 

২।

রাত জেগে আছে নদীর ওপারে

জেগে থাকা মানে আলোর চলাচল

এপারের বৃষ্টিরা মাঝি ধরেছে

নৌকোর খোলা পেটে রুমঝুম বেসাতি বসাবে

তারপর রেঁধে খাবে খুব ঝাল ইলিশের ঝোল

দর বেশি বেড়ে হ্যারিকেন তেল উপচালো

 

৩।

চোখ উপড়ে নিয়ে এলাম আমার চোখের জন্যে

এই চোখ যাতে তোমাকে ছাড়া আর চেনেনা কাউকে

ছড়ে গেছে পাঁজরের হাড় মুখভর্তি পানের বরজ

শুকনো ঘরের নাভিতে বসে আছি

কেবল তোমার চোখ সাপের মণিটি

দুর্ভেদ্য কালোর মাটিতে শুধু একটু আলো ফেলে আছে

দুধ আর কলা দিই গোবিন্দভোগের সুবাস

দমকা হাওয়া এলো সাথে ঠান্ডা ঝড়

চোখ গড়াগড়ি খেলো হাঁটার সরসর শব্দ

আমিও খোলস ছাড়ি শরে গাঁথি তীব্র তোমায়  

 

 

 

2 comments: