বাক্‌ ১৪৫ ।। তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়


 

ক্লীবজন্ম

 

মরব তো বটেই, শুধু গন্ধ, পুষ্প আলাদা করার জন্য এই যে গাঢ় নুনের গণ্ডির দুদিকে দাঁড়িয়ে নাড়ি টানাটানি খেলায় মেতেছি, এটা শেষ করে যাই, ভাইসকল। নক্ষত্রে আকাশ ফুটেছে, আমরা তো শুধু একদিক থেকেই তাকাতে শিখেছি, নাহলে কবেই বুঝে যেতাম খরগোশের শরীর নেই, আসলে দুটো মেরু—একটা গর্তে ঢুকিয়ে দিলে ও ভাবে অন্য মেরুও চাপা পড়ে গেছে। আর শেয়াল কিন্তু পেছনের মেরুটাই টেনে নিয়ে যায় বেরাদরের জন্য। মরব তো বটেই, মায়েরা দণ্ডি কেটে উঠে দাঁড়াল, আমরা মুড়ি ছড়িয়ে দিচ্ছি বাবার হাঁসের মন্তাজে...'মামেকং শরণং ব্রজ', কিন্তু তারপর? শরণ তো যুক্তাক্ষর চেনে না, ওকে পরিবার বোঝাব কী করে?

 

ওই যে ভুলভাল রমণ হল, সেই থেকে ঊরুর ভেতর খোকা নিয়ে ঘুরছে ফকির। মেয়েটিকেও বলিহারি, কী এত পুলক তোর দিব্যরূপ খাটে তোলবার? ছাই ছাড়া ব্রাহ্মণভোজন যেহেতু আয়োজক সাজাতেই পারেন না, গৃহকর্তা সেই ভেবে একটু কম কেঁদেছিলেন রাতে। সহস্র চোখের গল্পটি আলাদা, এখানে খোকাটি পরে দামড়া হয়ে মদের অধিপতি হবে। সমাজসংস্কার তো অনেক পরের নখরা, ওই দামড়াটি না থাকলে মায়েরা পারত নাকি কর্তার ভাল্লুকপ্রাণ খুবলে খেতে অবদংশ ভেবে!

 

রহিল নামানো ঝোলা, ভোলা গেল পাতার নরকে। পাতার নরক নিয়ে আমরা চিত্র নামাতে যেতে লেন্স যতবার ছিলা টান করে দৃশ্য ধরতে যায়, স্বয়ম্বর পঙ্গু করে উঠে যায় গাছের বিবাহ। এর চেয়ে গবাদি শিষ্যদের বিবাহ সুন্দর, নিমন্ত্রণ সবান্ধব পৌঁছে যায়! কিন্তু সে তো প্রজাপত্য, আমাদের আবার হরণ ছাড়া অন্য কিছু শেখায়নি দুনিয়া। শিকড় সমেত রথে তুলে দে দৌড়, দে দৌড়— অপহৃতার হাসি শোনো! ও যেন এমনই চেয়েছিল। শুধু যতবার লাজুক জঙ্গলের ভেতর দোর্দণ্ডপ্রতাপ মহিষ পুঁততে যাচ্ছি, সিংহের থাবার গন্ধে জ্বলে যাচ্ছে নাকের ঈশ্বর।

 

বড় ছেলে অশ্বমেধ যজ্ঞের ব্যাপারে না বলেনি একবারও (মানুষ করতে পারলাম তাহলে! কী বলেন!)... ওরই মাতুলালয়ের কেউ ঘোড়া সাজবে। এমনই দস্তুর। ওর মা একটু আপত্তি তুলেছিল, কিন্তু এই তল্লাটে চিলেকোঠার চন্দ্রাহতা নিয়ে যেহেতু গবেষণার সম্ভাবনাই নেই, তাই চুপ করে গেছে। ঘোড়াটি এতদিন বেকার ঘুরছিল, শেষমেশ কাজে লাগবে ভেবে শ্বশুরবাড়ি তো আনন্দে আত্মহারা। কপালে 'বিফলে মূল্য ফেরত' এঁটে দিতেই ও শুরু করল দৌড়। পেশির ওঠানামা দেখে পাড়ার বৌ-মেয়েরা আড়ালে ফোঁপাতে চলে গেল (বুঝি, বুঝি, সবই বুঝি!)... বসুন্ধরা চক্কর মেরে ফিরল যেদিন, সেদিন ওর ধুম জ্বর! "এক বাঁও মেলে না... দো বাঁও মেলে না..." জপসহযোগে, আহা! কী নিপুণ কোপে পঞ্চভূতের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানালাম।

 

যজ্ঞ অসাধারণ; গান ও স্যালুট আলাদাভাবে পরিবেশনা সরকার বাহাদুরকেও প্রবল আমোদ দিয়েছে— লোকমুখে শুনেছি। শুধু একটি বেহায়া নকুল এসে লুটোপুটি খাচ্ছে হোমের উঠোনে। ও যতক্ষণ না হিরণ্য হচ্ছে, ততক্ষণ বড় ছেলের রক্তবমি... (বিশাল দামামা পিটিয়ে আকাশ থেকে শাপ ছুঁড়ছে পূর্বপুরুষের দল।

 

সবার ঠোঁটের ভাঁজ জোঁকের মাথার মতো ভোঁতা।)

 

 

1 comment: