বাক্‌ ১৪৫ ।। বহতা অংশুমালী

 

কোনারক মন্দিরে

 

কোনারক মন্দিরের কালের চাকায়

আলস্যকন্যেরা ঘণ্টায় ঘণ্টায় হাই তোলে

নিরঞ্জনা নিজেকে বেড়ে দেয় অফিস ফাইলে

একটু বেশী চৌকশ, অনেকটা বেশী পরিশ্রমী

প্রবল ইঞ্জিন শুধু নয়,

যথেষ্ট তেল যাতে হড়কে যান উপরিওলারা

তাহলেই উপরের কিছু ধাপ মেলে

গলাকে কর্কশ হতে হবে

হাতকে রোমশ হতে হবে

ছফুট লম্বা হলে ভালো

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তুমি রেচন কি পারো?

নইলে কথার মাঝে কাজের কথারা উঁকি দিলে

অফিস বোঝে না

কোনারক সূর্যমন্দিরে

রাজার পুরুষঅঙ্গে ধীরে ধীরে চুমো খায় দাসী

রাজার ঠোঁটের কাছে মুখসুধা এনে দেন রাণী

জ্যোৎস্নায় ধুয়ে যায় আধুনিক ওড়িশার কুৎসিত লোহার সিঁড়িতে

ধরে রাখা খোলামেলা সোচ্চার প্রাচীন স্থাপনা

যেন ঠিক সুন্দরীর ক্লিপে আঁটা দাঁতের মতন

আলস্যকন্যেরা হাই তোলে, মাদল বাজায়

নিরঞ্জনা সমস্তদিন

কাজ করে যায়

নিরঞ্জনা দেরি করে বাড়িতে ফিরেই

জানতে চায় "চা খেয়েছো তুমি?"

"হোমওয়র্ক করেছে কি সুমি?"

"স্কুলের প্রোজেক্ট কবে আছে?"

রাত্রের মন্থনে ওঠে শুধু কালকূট ধোঁয়া

মন্দার পর্বত কাঁপে, বাড়বাগ্নি প্রবল ঘর্ষণে

নিরঞ্জনা নিয়মমাফিক

বাসুকির মুখের দিকেই

নিরঞ্জনা নিয়ম মাফিক

আজকেও অমৃত পেলো না

মন্দার পর্বত তবু রেখে দিয়ে এলো

ফেলে দিলো রবারের ভিতরের বীজের তরল

শেষ কবে শোনা গেছে উচ্চৈশ্রবার হ্রেষাধ্বনি?

সপ্তাহান্ত পৃথিবীর সিজিলমিছিলে কেটে যাবে

কালের চাকার মাঝে চাকার নাভীতে

ঘুম ভেঙে ওঠে রাণী, চারিদিকে তার

আলস্যকন্যেরা হাই তোলে

 

 

 

 

Ophiocordyceps তুমি 

 

 

মাথার মধ্যে এমনভাবে ঢুকে আছো কেন ? 

কেউ দেখতে পাচ্ছে না রক্তপাত 

কেউ সাজাতে পারছে না চিতা 

প্রেম এমন একটা প্যাথোজেনেসিস  

যে সমস্ত দুপুরটাকে কোহলে ডুবিয়ে রেখে 

বিকেলের হাতে ছুঁড়ে দেয় 

প্রেম এমন একটা   সংক্রমণ   

যা বংশধারা বিব্রত ক'রে  

যযাতিকে কানে কানে বলে 

কয়েকটা বসন্ত আরো পেলে ভালো হতো 

নইলে কখনো কোনো শ্লথগতি যুবতীর জরায়ুতে ঘুম দেয়া যেত

আর তার রক্তাভ নখের আঁচড়ে -

কিউনিফর্ম লিখে দিত জিনের নতুন প্রতিচ্ছবি 

এখন দেখাই যদি ঘাড়ে চেপে আছো কেউ বিশ্বাসই করে না 

দুটো  ঝিঁঝিঁ পোকা তার অনাহূত পরজীবি অতিথির চাপে 

হঠাৎ ভুতগ্রস্ত উড়ানে পুকুরে  ডুবে গেলো  

সবুজ জলের নীচে মিলনোৎসুক কীট মুখ বার করে  

ঝিঁঝিঁ পোকা ভেসে থাকে, 

তাকে কেউ বিঃশ্বাসই করেনি 

অফিওকর্ডিসেপস মরা পিঁপড়ের থেকে শুঁড় বার করে 

তুমি কি আমার থেকে বার হবে গভীর রাত্রিতে?

তুমি কি আমার সামনে এসে বসবে? বলবে? "আমি আছি"

এমন ভীষণ তুমি ধারালো ছুরির মতো কেন? 

যদি বলি প্রাণ দিতে চাই 

যদি বলি তুমি ডেকেছিলে?

তবু কেউ বিশ্বাসই করে না

 

3 comments:

  1. প্রথম কবিতায় যেন আধুনিক দেবদাসীর রোজনামচা, সমস্ত না করতে পারা প্রতিবাদ, সমস্ত বাধ্যবাধকতার দলিল শব্দের পাথর হয়ে খোদাই করে গেছে শিলালিপি, নিজের জীবনের অন্তিম রসটুকু নিংড়ে।

    দ্বিতীয়টিতে তেমনই অলৌকিক আহ্বানের তীব্র আকুতি, অভিমান, অনুযোগের বৃষ্টি যেন ঐ পুকুরেই অদৃশ্য রক্ত হয়ে ঝরে।

    ReplyDelete
  2. দুটো দু রকম। বেশ ভালো লেগেছে

    ReplyDelete