স্ট্যান্ড বাই
ফলাফল বা ক্রিটিসিজম যায় না। মূল ব্যাপার হল, তিনি নিজের থেকে সংঘটার নাম জানতে চেয়েছেন আর নিজের থেকে তাদের যে কোনো মুহূর্ত মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। এটাই যেন যথেষ্ট ছিল। নিউইয়র্কের ডেভিড স্ট্রিটে ওয়াইট বয়েজ-এর বিভোক্ষের দায়িত্বে আছেন স্টিভেন হক। সে নতুন সদস্যপদপ্রার্থীদের পুরুষত্ব নিজে যাচাই করছিল। নতুন সদস্যদের টানা তিন ঘণ্টা মাস্টারবেশন করতে হবে। যে দুইজন সর্বোচ্চ কয়েকবার পারবে তারা প্রথম রাউন্ডে সিলেক্টেড হবে। পরে এই দুইজনের মধ্যে একটা স্ট্রিট ফাইট হবে। যে জিতবে সে দলে ঢুকে যাবে আর যে হারবে তাকে সেখানে ফেলে রাখা হবে। তাকে হসপিটালে নেওয়ার দায়িত্ব ওয়াইট বয়েজ-এর নয়।
স্টিফেন হক যখন নিউজটা জানতে পারলেন তখন সে তার পাশে দাঁড়ানো কারভারকে বলল— তুমি দেখো ওদের আমি আসছি। স্টিফেন হক একটা সিগারেট ধরিয়ে আন্দোলনের জনতা থেকে বের হয়ে গেল। সে এখন পাবলিক পার্কের দিকে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটা ফোন কল এল। ব্রুকলিনে ওয়াইট বয়েজ-এর কিছু ছেলে সোশিয়ালিস্টদের বাড়িতে আক্রমণ করে মারামারি করেছে। তারা এখন পুলিশ কাস্টোডিতে। স্টিফেন এসব বিবেচনায় নিল না। কিছু ওয়াইট বয়েজ সদস্য আবার নিজেরা বিভক্ত হয়ে নতুন একটা দল গড়বার চেষ্টা করছে। স্টিফেনের হাসি পেয়ে গেল।
পার্কের বেঞ্চিতে বসে স্টিফেন নিজের জিপারটা খুলে পিনেসটা বের করে আনল। পাবলিক মাস্টারবেশন যদিও এখানে লিগাল না। তবুও স্টিফেন পাত্তা দিল না। ওয়াইটদের দাপট সবসময় বেশি ছিল, এখনও থাকবে। ঘষে ঘষে ঝুরা বের করার সময়ে স্টিফেন তৃপ্তিতে নুয়ে পড়ল। কারণ তাদের প্রিয় প্রেসিডেন্ট ফার্স্ট প্রেসিডেন্টশিয়াল ডিবেটে বলেছেন— প্রাউড বয়েজ, স্ট্যান্ড ডাউন আর স্ট্যান্ড বাই।
এখানে ‘স্ট্যান্ড বাই’ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
টি.এস. এলিয়ট
এইবারের সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ জেতা সাহিত্যিককে নিয়ে কাজল যথেষ্ট কড়া মন্তব্য করল। মন্তব্যগুলি যেমন ব্যয়বহুল সেরকম কড়া। এক জায়গায় কাজল সেই সাহিত্যিকের একটা কবিতা নিয়ে চরম এক সমালোচনা লিখল। কবিতাটি সুলায়মান(আঃ)-এর বিচার ক্ষমতা নিয়ে। কাজল প্রমাণ করে ছাড়ল ফেসবুকে এই ধরনের কবিতা লিখে সাহিত্যিক বেগম সাদা চামড়াদের আলাদা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন। এসব করেই কাজল চলে গেল শাহবাগের ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে। সে নিজে আসলে এসব সমর্থন করে না। কারণ এতে নিজের প্রেমিকাকে নিজের মতো করে স্পর্শের অধিকারও ক্ষুণ্ণ হয়। রিকশায় বসে থাকার সময়ে সবার চোখের আড়ালে যদি প্রেমিকার ব্রা-র হুকটা লুজ করে দেওয়া বা তার স্তনের বোঁটাটাকে তীক্ষ্ণভাবে টানই না দেওয়া যায় তাহলে রিলেশনশিপের মূল্য কী?
দুপুরবেলা কাজল আন্দোলনকারীদের কয়েকজনের সঙ্গে লাঞ্চ সারছিল। কথা হচ্ছিল, কোন এক মেয়র পিস্তলসহ ফেসবুকে নিজের ছবি দিয়েছেন তা নিয়ে। কিন্তু এর মধ্যেই তাদের মধ্যে একজন বলে উঠল— কাজল ভাই, আপনারা কি টি.এস. এলিয়টের প্রভাব থেকে কখনও বের হতে পারবেন না?
কাজল ঠিক করল, এরপর থেকে সে এসব বালছাল আন্দোলনে আর আসবে না।
ট্রায়াল রান
একদিনের জন্য ছেলেটাকে বিক্রি করে দিয়ে শাহানার খারাপ
লাগছে না। যেই সময় যাচ্ছে, এরকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিজে থাকে সেটা কোনো বিষয় না। কিন্তু ছেলেটার বয়স
সাত। তাকে এভাবে রাখতে শাহানার কষ্ট হয়। শাহানা যেই বাড়িতে বুয়াগিরি করে সেখানকার
ওমেন-ইন-চার্জ হঠাৎ করে আজ এরকম প্রস্তাব পেশ করল। একদিন বাচ্চাটা দিতে হবে। বিনিময়ে আট হাজার টাকা দেওয়া হবে। শাহানা আসলে
ফ্রি-ই দিত। এ ধরনের বড়লোকের সঙ্গে মিশে যদি একবেলা খাওয়া যায়, কিছু ভালো পোশাক পরা যায় তাতে ক্ষতি কী?
শাহানা টাকার ব্যাপারে আর উদারতা দেখায়নি। স্বামী অন্য জায়গায় বিয়ে করলেও মাঝেমাঝে এসে টাকা চায়। এ জন্যেই হয়তো এখনও আসে। শাহানার ইচ্ছা করে না সে চলে যাক।
দুপুর থেকে শাহানার কেমন খালি খালি লাগতে লাগল। খুপরিতে মাত্র দুইজনেরই জায়গা হয় না তবুও তার খালিখালি লাগছে। অন্য সময়ে ছেলেটা নিজে শোয়ার জন্য মার কাছে আবদার করত। আজ নিজে ভালো জায়গা নিয়ে শুয়েও ভালো লাগছে না। বিকেলবেলা ছেলের দলবল এসে ওর খোঁজ করল। আজ মার্বেল টুর্নামেন্ট। শাহানার ছেলে টপ স্ট্রাইকার। শাহানার মনই খারাপ হয়ে গেল।
রাত দশটার দিকে গাড়ি এসে বস্তির সামনে থামল। শাহানা দেখল গাড়ি খুলে দিতেই তার ছেলে তার দিকে দৌড়ে আসছে। ছেলে এসেই শাহানার পা জড়িয়ে ধরল। শাহানার সারাদিনের একাকিত্ব নিমেষে কেটে গেল। ছেলেটার গায়ের দামি শার্ট আর প্যান্টও কোনো বিলম্ব সৃষ্টি করল না।
ভদ্রমহিলা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে এসব দেখছিলেন। এইবার বললেন— তোমার ছেলেটাকে আমার আজ খুব ভালো লেগেছে। ওকে পুরোপুরি বিক্রি করবে? আমি ভালো পেমেন্ট করব।
ছেলে অতকিছু বুঝে না। সে এর মধ্যেই তার সঙ্গের ছেলেপেলেদের খুঁজে বের করে নিজের পরনের জামা দেখাচ্ছে। শাহানা একটুও দেরি না করে বলল— এক্কারে না। প্রতি মাসে ভালো করে দেওন লাগবি।
ছেলেটার বাবা পরের সপ্তাহেই যে আসবে। হাত একদম খালি।
No comments:
Post a Comment