বাক্‌ ১৪৫ ।। অনিন্দিতা গুপ্ত রায়

 

ঋতুকথা

 

গ্রীষ্ম

 

করাতের মুখের সামনে পড়ে থাকা কাঠের পুতুল যেন, মনে হয় কতবার। আড়াআড়ি পাঁজরের ওপর দিয়ে ধারালো আগুনের দৌড়। পরিচিত উপমাসূচক শব্দ বাসী ও বাতিল। তাই বলে ওঠা হয় না বৃষ্টির অপেক্ষায় বসে থেকে থেকে কত জন্ম অবধি দীর্ঘ হচ্ছে অপেক্ষা। জলতল ও কলসির গল্পের দাঁড়কাক নুড়ি খুঁজে খুঁজে হয়রান, হাঁফিয়ে পড়েছে। তেতে ওঠা মাটি আর আকাশের মাঝামাঝি আটকে গেছে সূর্য। পূর্বাভাসে যতটুকু বাস্পকথা,  তা দিয়ে সামান্য রুমাল ভেজেনা শুধু নিম্নচাপের মুখে গৃহস্থালি উড়ে যায়!

 

বর্ষা

 

মেঘের সঙ্গে আশ্চর্য কথকতার আখ্যান আছে আমার। সেসব খুব নিরিবিলির কথা। মারী ও মৃত্যু দরজায় তালা এঁটে চাবিটি লুকোলে আমাদেরও অগোচর জলতল হু হু বাড়ে কমে। বৃষ্টির শেষপর্বে নি:সঙ্গ ডাকবাংলো আর বনমোরগের রাগী একা ছটফটানি  ক্যানভাসের উল্টোদিকে মুখ ফিরিয়ে। এসবই উদাসীনতা অভ্যেস করায়, সুখী গৃহকোণ মার্কা বাস্তবতা টপকে। জল কথাটার ভিতর কতটা সাঁতার আর সংশয় একাকার হয়ে আছে, বস্তুত তাকেই শিখতে আসি। সব চিঠিপত্তর তো ডাকটিকিট পায় না, মেইলট্রেনও স্টেশনে থামে না সব। ময়ূরের ছদ্মবেশে প্রতি বর্ষায় শুধু কৃষকের জমানো বীজধানের ভিতর মেঘ ঢুকে পড়ে। অলক্ষ্যে "ভারত আমার ভারতবর্ষ স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো" বাজে, বাজতেই থাকে।

 

 

শরত

 

এই তো দাঁড়িয়ে আছি উনুনের সামনে। হাতপাখার নড়ে ওঠার গা থেকে ফুলকি ঝরে পড়ছে আর কুড়িয়ে তুলে দেখছি ঝলসানো শিউলি পাপড়ি।  নদীর গহনে চিৎ- সাঁতারে কোনমতে ভেসে থাকার অভ্যেস করছিল মৎস্যকন্যে। চুলে শালুক জড়িয়ে একা একাই ডুবে মরে যাওয়ার পর আর কোন প্রমাণ নেই আপাতত সে ধুকপুকানির। ভেসে যাওয়া একটা বাঁশের  কাঠামোয় শুধু জরিপাড় জাপটে তখনো! 

 

হেমন্ত

 

ডানা ঝাপটানোর শব্দে গমনপথের মানচিত্র তুমি নাও পেতে পারো। নিজস্ব কক্ষে, সামান্য হেলান দিয়ে ঘুরে ঘুরে চলা, তোমাকেই খুঁজে নিতে হবে --- অজস্র ছায়াপথের ভিতর, আলো বা অন্ধকারে। পৃথিবীর মত তবে সর্বংসহা হতে পারো। কোমরবন্ধনী থেকে জ্বলন্ত মশাল তুলে আনো যদি, সে এক অন্যতর নক্ষত্রকল্পনা, নারীমূর্তির। ভাবলেশহীন, অপারগ উচ্চারনের অর্থ খুঁজতে আরো এক জ্যোৎস্নাময় মাঠের ভিতর পথ থেমে যাবে। স্পর্শদোষে পাথর আঙুল ততদিনে কবিতা লিখতে ভুলে গেছে। ভবিতব্য ভেবে যাকে নি:শর্ত ভুলে এলে মাঝ রাস্তায়, সেও এই হিমে ভেজা মধ্যরাতে তোমাকেই খুঁজে খুঁজে শীতে বা শরতে চলে যাবে। অনির্ধারিত সেই সময়বিন্দুর হাতে হাত রেখো একবার, যদি পারো!  

 

শীত

 

ছয়মাস যাবত এসব আচ্ছাদন এই হিমযুগের প্রস্তাবনা লিখে যাচ্ছে। রঙিন ও ফুলছাপ হস্তশিল্পের ভাঁজে ইন্দ্রিয় আপাতত সুরক্ষিত। কতবছরের মুখ বেঁধে রাখার অভ্যেস কাজে লাগাচ্ছে কেউ কেউ। দুজনের হাতের মাঝখানে বরফ প্রাচীর ছুঁয়ে ফেললে পারদস্তম্ভের হু হু পতন। গুঁড়ো হিম অন্ধতা সাজায়, আয়নায়, ঝাপসা মুখোশে। স্থিরচিত্রের মতো মুখে হাসি না কি কান্না, বোঝার জন্য আমি চোখ দুটো পড়তে থাকি,  প্রানপণ! 

 

বসন্ত

 

একটি সুপ্রাচীন খিদে বরাবর মধু ও  জমে ওঠা পতঙ্গগান। হলুদ রঙের প্রাবল্যে এই তো খুব সুগন্ধি সমীকরণ বনান্তরে। কাঠকুড়ানি মেয়ের ব্যাকড্রপে ডিমের কুসুম, বিকেল ফাটানো রোদ। পাকস্থলীর ভাঁজে কোনও ঝিম ধরা অলসতা নেই। পিকনিক ঘিরে থাকা জটলাটির শিরোনাম নিয়ে কথা হয় কিছু।এখন আর মনে পড়ছে না ঠিক কী বলছিলাম! উঠে আসা ও নিভে যাওয়া প্রশ্নগুলো অমীমাংসিত, তা বলে তো বাতিল ছিল না! তবু বিস্মৃতি রোগ ভালো, এসময়।

নিয়ন্ত্রণসীমার বাইরে যা যা ঘটমান, সমস্তই ভালো...মেনে নেওয়া হিতকর।

 

 

7 comments:

  1. অসাধারণ বললেও কম বলা হবে ❤❤❤

    ReplyDelete
  2. আহা। এমন কবিতাগুলি!

    ReplyDelete
  3. আহা আহা এ লেখার কোনো মন্তব্য হয় না। উপলব্ধি অনুভূতি ও কল্পনার, জোরালো আচ্ছন্ন শব্দের সঙ্গে নিবিড় ভ্রমণ।

    ReplyDelete
  4. আহা আহা এ লেখার কোনো মন্তব্য হয় না। উপলব্ধি অনুভূতি ও কল্পনার, জোরালো আচ্ছন্ন শব্দের সঙ্গে নিবিড় ভ্রমণ।

    ReplyDelete
  5. আহা আহা এ লেখার কোনো মন্তব্য হয় না। উপলব্ধি অনুভূতি ও কল্পনার, জোরালো আচ্ছন্ন শব্দের সঙ্গে নিবিড় ভ্রমণ।

    ReplyDelete
  6. আহা আহা এ লেখার কোনো মন্তব্য হয় না। উপলব্ধি অনুভূতি ও কল্পনার, জোরালো আচ্ছন্ন শব্দের সঙ্গে নিবিড় ভ্রমণ।

    ReplyDelete
  7. আহা আহা এ লেখার কোনো মন্তব্য হয় না। উপলব্ধি অনুভূতি ও কল্পনার, জোরালো আচ্ছন্ন শব্দের সঙ্গে নিবিড় ভ্রমণ।

    ReplyDelete