বাক্‌ ১৪৫ ।। অদিতি


মুক্তি

 

ছয় বছরের সম্পর্ক দুই বাড়িতে ধীরে ধীরে চার হাত এক করার কথা চলছে কলেজ-প্রেম-ইউনিভার্সিটি ছাড়িয়ে এখন চাকরি জীবনে দেখতে বাইরে থেকে ভারী মিষ্টি মিষ্টি সম্পর্ক

কিন্তু মেয়েটির একটিই সমস্যা— বড্ড ভালোবাসে, বড্ড পজেসিভ। এই নিয়ে বর্তমানে  চাকুরিসূত্রে ভিনরাজ্যে থাকা ছেলেটির জীবন ওষ্ঠাগত বড্ড ভালোবাসায় দু’জনেই হাঁপিয়ে উঠছেমেয়েটি বুঝতে পারছে ছেলেটি আর তার এক  কলিগ খুব কাছে চলে আসছেইনট্যুশন, কিন্তু পুরোটা কিছু ঘটনার ডালপালা মেলালে অঙ্কটা খুব সহজে মিলছে  মন কখনও তাকে মিথ্যা বলেনি

দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে ছোটোবেলাকার প্রেম-গ্রিটিংস কার্ড যা যা জ্বালানো যায় জ্বলছে একটা আগুনে এত মুক্তির স্বাদ কোনোদিন মেয়েটি পায়নি অ্যাত্ত ভালোবাসা থেকে মুক্তি...

 

 

 

 

ভাঙন

 

বউভাতের পরের দিন প্রচুর গিফট-তত্ত্ব সব ঘরের এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ঘরের মধ্যে বাসি ফুলের গন্ধ একটু আগে ননদেরা, শাশুড়িরা আর যত আত্মীয়া আছে কোনটা কে হয় এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি নন্দিনী

          সবার মধ্যে গিফট-তত্ত্ব বিলিবাটোয়ারা হয়ে গেছে বাকি যেগুলো পড়ে আছে শাশুড়ি বললেন আলমারিতে তুলে রাখতে কিন্তু কিছুতেই আলমারি খুলছে না নতুন আলমারি নন্দিনীর বাড়ি থেকে দেওয়া সবাই চেষ্টা করছে নন্দিনীর বরও পারল না অবশেষে নন্দিনীর শ্বশুর এলেন তিনিও পারলেন না হঠাৎ করে একঘর লোকের মাঝে উনি বলে বসলেন, ‘আলমারিটা অরজিনাল গোদরেজের তো!’

নন্দিনীর বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল চোখের কোণটা ভিজছে ও বুঝতে পারছে পড়াশোনায় এত ভালো, এত ভালো চাকরি করে সে কোথায় এসে পড়ল হঠাৎ নন্দিনীর শাশুড়ি ঘরে এসে বললেন, ‘চাবিটা ভুল করে এক্সচেঞ্জ হয়ে গেছে’ সবাই বলল, ‘এ বাবা দেখো কি কাণ্ড’। আবার সবাই আগের মতো আনন্দে মেতে উঠল

কিন্তু এক জায়গায় ভাঙন ধরল সবার অগোচরে সেই ভাঙন মনে হয় না কোনোদিন জোড়া লাগবে...

 

 

 

 

অপয়া

 

আজ এপ্রিলের আঠেরো। আজ তনয়ার বিয়ের দিন। না বিয়েটা হচ্ছে না। কত কেনাকাটা, ক্যাটারার বুকিং, হল বুকিং, বিউটিশিয়ান বুকিং, ক্যামেরাম্যানের অগ্রিম টাকা সব জলে

ছাপোষা মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ে তনয়া। বি. এ পাশ করতেই বাবা বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজতে শুরু করেছিল। অবশেষে দু’ বছর পর পাওয়া গেছে উপযুক্ত পাত্রসরকারি চাকরি করে। মধ্যবিত্ত মানুষদের মনে হয় ছেলে সরকারি চাকরি মানেই জীবনে দাঁড়িয়ে গেছে। পাত্র রাতুল দেখতেও বেশ। তবে তনয়া দেখেছে একটু আঁতেল টাইপ কী করবে তনয়া সরকারি চাকুরে, পৈতৃক বাড়ি, দেখতে শুনতে ভালো, শুধু আঁতেল হবার কারণে এই পাত্র হাতছাড়া করবে না বাবা

বিয়ের কার্ডগুলো পড়ে রয়েছে। এখনও কিছু বিলি করা বাকি ছিল তেইশে মার্চ প্রথম লকডাউন শুরু হল। চোদ্দোই এপ্রিল পর্যন্ত চলবেতখনও তনয়া ভেবেছিল আঠেরোতে বিয়ে তার আগে সব ঠিক হয়ে যাবেহল না কিছু ঠিকশুধু তনয়া একটা দারুণ তকমা পেল। অপয়াছেলের পিসিমা, মা সবাই বলেছে কস্মিনকালে তারা শোনেনি এরকম ঘটনা তনয়ার বাবাও গজগজ করছে কোনো অ্যাডভান্স টাকা ফেরত না পেয়ে। শুধু কোনো দোষ নেই সরকারি চাকুরে রাতুলবাবুর

 

2 comments: