বাক্‌ ১৪৫ ।। ভূপাল চক্রবর্তী

 

যযাতির সংসার

 

জানলার গায়ে আছড়ে পড়া সজনে গাছটার সরু ডালগুলো ছাঁটবার কথা প্রায়ই মনে হয় সারাদিন ছোট ছোট টিপের মতো পাতা নামছে গাছ থেকে ন্যাড়া হয়ে যাবে একদিন গাছটা তারপর আবার নতুন পাতা, নতুন জীবন জানলার ধারে চেয়ার পেতে গাছটার এই নতুন হয়ে যাওয়া দেখতে দেখতেই মধ্যবয়স পার করে দিল মৃগাঙ্ক বুড়ো গাছে নতুন পাতা নতুন যৌবন মৃগাঙ্ক চুলে রং করে আরশির সামনে দাঁড়ালে এই কচি হয়ে ওঠা গাছটার কথা মনে হয় সত্তর পার হয়ে গেল গত বছর তাকিয়ে থাকতে থাকতে বুকের ভেতরটা আঁচড়ায় যেন

ডাল বেয়ে ওপরে উঠছে হিটলার মৃগাঙ্কর সকালের চায়ের কাপ ঠোঁটের কাছে থমকে যায় খবরের কাগজে চোখ বোলানোর কথা ভুলে যায় সে ডালটা পায়ের চাপে দুলছে! একটু এদিক-ওদিক হলেই সোজা মাটিতে মৃগাঙ্ক চিৎকার করে ওঠে সকালের ধরা গলায়হেই যা! যা নাম, এই হিটলার, নাম ওখান থেকে হিটলার কান খাড়া করে মৃগাঙ্ককে পাতার ফাঁক দিয়ে একবার দেখে ম্যাঁও করে ডেকে ঘাড় ঘুরিয়ে নেয়

বাপ-মা মরা হিটলার ছোট থেকে বেড়ালটাকে মানুষ করেছে মৃগাঙ্ক এখন মুখ ফেরাচ্ছে আর একবার চোখ তুলে ডাকতে গিয়ে লক্ষ করে হিটলার লাফ দিয়ে উলটোদিকের বাড়িটার পায়খানার ছাদে মিলিয়ে গেল লাফ দেওয়াটা না দেখলেই ভাল হত বুকের ভেতরটা ধরাস করে উঠেছিল! ভাগ্য ভাল পড়ে মরেনি যদিও বেড়ালেরা ছাদ থেকে বা গাছ থেকে পড়ে মারা গেছে বড় একটা শোনা যায় না কিন্তু হিটলারের বারো বছর হয়ে গেল আয়ুর হিসেবে বলতে গেলে বারো বছরে বেড়াল মারাই যায় মৃগাঙ্ক ধাতস্থ হয় খবরের কাগজটা টেনে নিয়ে জুত করে বসে চেয়ারে ছি! কাগজ খুলতে ঘেন্না করে আজকাল আট বছরের নাতনিকে ধর্ষণ করেছে দাদু! মৃগাঙ্কর প্রেস্টিজে লাগে সেও তো সুলগ্নার দাদু সুলগ্না আমেরিকায় তার বাবার কাছে কাগজ পড়া এবার ছেড়ে দেবে সে!

ঠান্ডা হয়ে আসা চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে উঠে দাঁড়ায় মৃগাঙ্ক বুড়ো হাড়ে কেমন তরুণ তুর্কির মতো লাফাল হিটলার সে পারবে? কোমরের হাড় সরে গেছিল বাষট্টিতে, তারপর হাঁটুতে কটকট শব্দ ছেলে আমেরিকা থেকে ম্যায়োট কি হোল সার্জারি নামের কী একটা বাতলে দিল, ব্যাস! পিতৃদায় ফিনিস এই বয়সে বেড়ালের আর্থারাইটিস হয়, দাঁতের রোগ হয়, ক্যান্সারও হয় বাড়ির বেড়াল, যত্নে থাকে তাই কিন্তু সে নিজেও তো যত্নেই আছে, ঘড়ি মাপা খাওয়া-শোয়া তবে হ্যাঁ, মৃগাঙ্ক তো আর হিটলার নয়, হিটলারও মৃগাঙ্ক নয় তফাত অনেক

আজগুবি ভাবনায় ডুব দিয়ে মৃগাঙ্ক মাথা হেলিয়ে পাতার ফাঁকে ফাঁকে চোখ চালায় ছাদের আলসেতে অন্য বেড়ালের ন্যাজ মনে হল! ভুল দেখার চোখ তো তার নয় হলুদ লোমশ ল্যাজ এটা তো মতির ল্যাজ! মতি? এলাকার ডাকসাইটে সুন্দরী মেনি বেড়াল মতি হিটলার যৌবনে যাচ্ছেতাই ফস্টিনস্টি করত মতির সঙ্গে ইদানীং মতি খুব আসছিল বাড়িতে মৃগাঙ্ক দেখলেই তাড়ায় ওর দৃষ্টি ভাল নয়, মৃগাঙ্কর দিকে চোখের মণি বড় করে তাকায় হিটলারকেই খুঁজতে আসে, কিংবা চুরির মতলব হিটলারের দৃষ্টি কত সুন্দর! মণি দুটো চিঁড়ের ফালির মতো ম্রিয়মাণ, কী সুন্দর ধ্যানস্থ হয়ে বসে থাকে বড় শান্ত মুখচ্ছবি বুড়ো বয়সে যেমন হওয়া উচিত

একটা আওয়াজ আসছে অনেকটা হুলো বেড়ালেরা গলা মোটা করে ডাকলে যেমন হয় থেকে থেকে উঁ-উঁ-ম শব্দ গলাটা চেনা মৃগাঙ্কর শব্দটাও চেনা আদিখ্যেতা করার সময় হিটলার এই শব্দটাই করে ছাদ থেকে আসছে আওয়াজ মৃগাঙ্ক অস্থির বোধ করে

কমলা? কমলা কোথায় গেলি রে?— ব্যাপারটা খোলসা করতে হয় কমলা পাশের ঘর থেকে ঝাঁটা হাতে দাঁড়াতেই জানলার দিকে মুখ রেখেই মৃগাঙ্ক বলে, একবার দেখত হিটলার বাড়িতে আছে কিনা কমলা ভেবেছিল খবরের কাগজ খুঁজে পাচ্ছে না বলে তলব, হিটলারের কথা শুনে সে হাসেআমি কী করে জানব? আপনার বেড়ালের খবর আপনি জানেন আর আপনার বেড়াল জানে, দেখুন কোথায় চড়ে বেড়াচ্ছে এই তো উঠোনে গাছের তলায় নখ শানাচ্ছিল

চড়ে বেড়াচ্ছেকথাটায় মেজাজ তিরিক্ষে হয় মৃগাঙ্করচড়ে বেড়াতে যাবে কেন! হিটলার ইদানীং বাড়িতেই থাকে বেচারি বুড়ো হয়েছে বাড়ির লোকের একটু খেয়াল রাখা উচিত কমলাকে ধমকায় মৃগাঙ্কসারাদিন কী করিস? একটু খেয়াল রাখতে পারিস না

কথার ফাঁকে একবার যেন দেখা গেল আলসের ধারে আবার নীচে নেমে গেল ওর লেজটা বেশ চেনা যায় দূর থেকে গলার আওয়াজটাও এবার যদি মারপিট হয়! জখম হতে কতক্ষণ মতির চেহারা ভাল, বয়স কম ক’দিন আগে মারপিট করে কানের লতি কেটে বাড়ি এসেছিল রক্তারক্তি কাণ্ড ওষুধপত্র দিয়ে সেরেছে আবার যদি! ব্যাপারটা ভাল ঠেকে না মৃগাঙ্কর কমলাকে জাহ্নবী রান্নাঘরে ডেকে নিল জাহ্নবীও আজকাল হিটলারের ব্যাপারে উদাসীন একমাত্র মৃগাঙ্কই ওর কথা যা একটু ভাবে প্রাণী হলেও ওর বয়স হয়েছে কমলার চলে যাওয়াতে মাথা না ঘামিয়ে ছাদে গিয়ে একবার দেখা উচিত তার যাকে একবার ডাকলেই ছুটে আসে, কাল পর্যন্ত টেবিলে চায়ের কাপের পাশে চুপ করে বসেছিল, বোজা চোখ বিস্কুটটা ভাঙার শব্দে শুধু একবার চোখ খুলে মৃগাঙ্ককে দেখেছিল এই বয়সে হিটলার আর জাহ্নবী তার চব্বিশ ঘণ্টার সঙ্গী জাহ্নবীর অবশ্য টিভি আছে মৃগাঙ্কর টিভি একদম ভাল লাগে না ছেলে বিদেশে বউ নিয়ে পাড়ি দিয়েছে বছর দশেক হয়ে গেল এখন শুধু ফোন টিকিটাও দেখা যায় না জাহ্নবীর সঙ্গে যেটুকু কথা হয় তার বেশিরভাগই টিভি সিরিয়াল অথবা অসুখবিসুখ মৃগাঙ্কর ভাল লাগে না আদিত্য চলে যাবার সময়ই হিটলার এসেছিল একটা কাগজের বল বানিয়ে দিলে সেটা নিয়েই সারাদিন কাটিয়ে দিত আদিত্যর ছোটবেলার ব্যস্ততা ফিরে এসেছিল জাহ্নবী বলতআদিখ্যেতা! এখন সেই দামাল হিটলার আর নেই হিটলারের চোখ ছলছল করে সময় নষ্ট না করে সে ছাদের দিকে পা বাড়ায়

মতি পেছনের দিকটা উঁচু করে, লম্বা হয়ে বসে ল্যাজ নাড়াচ্ছে হিটলার সোজা হয়ে ল্যাজটা অ্যান্টেনার মতো করে, কান দুটো খাড়া করে মতিকে একবার-একবার চক্কর কাটছে, আবার দাঁড়িয়ে দেখছে মুখে সেই উঁ-উঁ-ম শব্দটা দু’পা এগিয়ে যায় মতির দিকে মতি ছুটে গিয়ে আবার একই ভঙ্গিতে পেছন তুলে বসল একদিন সকালে চায়ের কাপ হাতে মৃগাঙ্ক জানলার নীচে দেখেছিল দুটো ঘুঘু পাখিকে ওই রকম করতে আলসেতে মেয়ে ঘুঘুটা ডিমে তা দেবার মতো ঘাপটি হয়ে বসে আর ছেলে ঘুঘুটা চারপাশে সুর করে ঘুঘ ঘুঘ ঘু, ঘুঘ ঘুঘ ঘু শব্দ করে নাচছে মৃগাঙ্ক দেখেই বুঝতে পেরেছিল দু’জনের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরির খেলা চলছে জাহ্নবীকে ডেকে দেখিয়েছিল ওদের দু’জনের প্রণয়লীলা খুব লজ্জা পেয়েছিল জাহ্নবী বলেছিল, চলে এসো ওখান থেকে, ওদের ডিস্টার্ব করা ঠিক নয় মৃগাঙ্ক কতবার ঘুঘু দুটোর উপমা কাজে লাগিয়ে জাহ্নবীর কাছে নিজেকে উজাড় করে দিত কিন্তু এই বয়সে হিটলার! ছাদের আলসের সামনে দাঁড়িয়ে মৃগাঙ্ক দমে যায় হিটলার কি তাহলে বুড়ো হয়নি? বুড়ো কি তাহলে মৃগাঙ্কই?

আদিত্য যত বড় হচ্ছিল জাহ্নবী তত সরে সরে যাচ্ছিল মৃগাঙ্কর শরীর থেকে একচিলতে হাসি ছড়িয়ে বলত, যা সরে সরে যায় তাই সংসার জানো না? মৃগাঙ্ক চুপ করে থাকে ক্যাট হ্যাজ নাইন লাইভস্ বেড়ালের ন’টা জীবন ব্যাটারির ইংরাজি নয় সংখ্যার গর্তটা দিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছে একটা তীক্ষগতির বেড়াল মৃত মানুষের অবশিষ্ট আয়ু নিয়ে বেঁচে থাকার ন’টা সু্যোগ পায় বেড়ালেরা মৃগাঙ্কর মতো মানুষের শরীর নিয়ে একটার বেশি জীবন পেয়েছিল মহাভারতের যযাতি যযাতি কি মার্জার বংশোদ্ভূত ছিল? বুকের ভেতরটা আঁচড়ে ওঠে যেন! হিটলার হঠাৎ মতির ঘাড় কামড়ে ধরে পেছন থেকে মতির ঘাড়ে চেপে বসেছে মৃগাঙ্ককে পৌরুষ দেখাচ্ছে! মৃগাঙ্ক আলসের ওপর শরীরটা আরও ঝুঁকিয়ে দিয়ে ওদের অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করে সে ভুলে যায় নিজের বয়স ফিশফিশ করে হিটলারকে ডাকে, এই? এই হিটলার, যযাতি হিটলার, এটা তোর কততম জীবন রে!

কমলা কাপড় শুকোতে ছাদে আসে মৃগাঙ্ক দাদাবাবুকে আলসেতে ঝুঁকতে দেখে থমকে যায়দাদাবাবু? সক্কালবেলা এখানে কী করছেন? কী বিড়বিড় করছেন? মৃগাঙ্ক চকিতে ওদের আড়াল করে ঘুরে দাঁড়ায় গম্ভীর মুখে তাকায় সে আড়চোখে দেখা যায়, কমলা সায়াটা দড়িতে মেলার আগে একবার নিঙড়ে সপাটে ঝাড়া দিতে শরীরটা দুলে উঠল তার গাছকোমর বেঁধেছে কমলা আড়চোখ নামিয়ে বলে, কিছু না এলাম একটু ছাদে শাড়িটা মেলার জন্য কমলা আলসের দিকে এগিয়ে আসে মৃগাঙ্কর পাশে মতি আর হিটলারের দিকে ঠিক নজর গেছে! মৃগাঙ্ক এটাই আশঙ্কা করছিল কমলা বলে, ওই দেখুন আপনার হিটলার, একটু আগেই খুঁজছিলেন না? দেখুন কেমন অন্য বেড়ালের ঘাড়ের ওপর উঠে মস্তানি করছে আপনি ওকে আবার বুড়ো বলেন? বুড়ো না হাতি! আপনি নিজে বুড়ো মৃগাঙ্কর মাথা নেমে আসে লজ্জায় কী বলবে কমলাকে? সে তো ছেলেমানুষ নয়, সব বোঝে ওর ঠোঁট বেঁকিয়ে কথাটা বলার অর্থ কি মৃগাঙ্ক বুঝতে পারেনি? সব বুঝতে পারে সে শরীর দুলিয়ে মিচকে মিচকে হাসছে এখন কমলাকে এড়াতে চায় মৃগাঙ্ক ছাদের পরিবেশটাই বদলে দিয়েছে হিটলার আর কমলা মতির মতো ঢং করা কমলার পক্ষে শোভা পায়, মৃগাঙ্ক কি হিটলার যে কমলার ছলাকলা দেখে এই বয়সে কামড় বসাবে ইচ্ছে হচ্ছিল একটা ঢিল ছুঁড়ে হিটলার আর মতিকে তাড়ায়, কিন্তু তাতে ব্যাপারটা খারাপ হবে ভেবেই চাপা গাম্ভীর্য দেখিয়ে সিঁড়ির দিকে এগোয় মৃগাঙ্ক দ্রুত পা চালিয়ে সশব্দে যাবার সময় মৃগাঙ্ক বুঝতে পারে তার পদক্ষেপ মোটেই সত্তর বছরের মতো হল না! যেটা হল তা যেন দেমাকি যুবকের মতো অনেকটা এইভাবেই তো কোন একসময় সে হাঁটত! সে অনেককাল আগে

আয়নার সামনে দাঁড়ায় মৃগাঙ্ক হলদেটে, ঘোলা, জায়গায় জায়গায় কালো ছাতাপড়া দাগ কালো অংশগুলোয় শরীর দেখা যায় না মৃগাঙ্ক যেন অনেক পুরনো একটা ফটোগ্রাফ জাহ্নবী ছাড়া আর কেউ আয়নাটার সামনে দাঁড়ায় না মৃগাঙ্ক কালেভদ্রে দাঁড়ায় নিজেকে অ্যালবামের শতছিন্ন ছবির মতো লাগে গালের দু’পাশ খানিক তোবড়ানো, কষের দু’দিকেই মোট তিনটে দাঁত না থাকায় গাল দুটো নেবে গেছে গলার মাঝখানের হাড়টা উঁচুহাত দুটো মনে হয় যেন কেউ জুড়ে দিয়েছে শরীরের সঙ্গে মাথার মাঝখানটায় চুল উঠে ব্রহ্মতালু উন্মুক্ত মৃগাঙ্ক ভাবে, যযাতি কি এইরকমই বৃদ্ধ অবস্থায় যৌবন চেয়েছিল? ভয় হয় মৃগাঙ্কর সে চলে গেলে হিটলার হয়তো তারই অবশিষ্ট আয়ু নিয়ে বাঁচবে

জাহ্নবী ঘরে আসে আয়নার সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজেও গা ঘেঁষে দাঁড়ায় ঝাপসা আয়নায় কালো ছোপলাগা মান্ধাতা আমলের বয়স্ক দম্পতির ফটোগ্রাফ ফুটে ওঠে

নিজেকে দেখছ?

নাহ্

তাহলে দাঁড়িয়ে রয়েছ আয়নার সামনে?

দেখছি

কাকে?

যযাতিকে মৃগাঙ্কর যযাতিকে নাম শুনেছ?

শোনা শোনা লাগছে পৌরাণিক কেউ?

যৌবন ধার নিয়েছিল যযাতি তার ছেলে পুরুর কাছ থেকে

মৃগাঙ্কর কথায় শব্দ করে হেসে ওঠে জাহ্নবী মৃগাঙ্ক জাহ্নবীর হাসির দৃশ্যে এক আশ্চর্য মুহূর্ত অনুভব করে অনেককাল আগে, আদিত্যর পৃথিবীতে আসার অনেক আগে তার চারপাশে আলোড়িত হয় জাহ্নবীর মায়া মৃগাঙ্ক দৃষ্টি স্থির করে জাহ্নবীর কাঁধে হাত রাখে

জাহ্নবী উপেক্ষার ভঙ্গিতে স্বাভাবিক থেকেই বলে, ওষুধগুলো খাচ্ছ ঠিকমতো?

আমি কি বীতকাম প্রাণী জাহ্নবী?

হঠাৎ এই প্রশ্ন? তুমি কি নিজেকে যযাতি ভাবছ?

ইচ্ছে করে আমার ভেতরেও একটা যযাতি আছে, যেন বুকের ভেতর অহোরাত্র আঁচড়ায়

জাহ্নবী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মৃগাঙ্কর দিকে, লক্ষ করে তার দৃষ্টি বুড়িয়ে যাওয়া চেহারার মতো ম্লান নয়

হিটলার কী করেছে জানো?

কী করেছে?

মতির সাথে ছাদে সঙ্গম করছিল, এই বুড়ো বয়সে!

তাতে তোমার কী!

মৃগাঙ্ক চুপ করে থাকে জাহ্নবী তাকে বুঝতেই পারছে না মৃগাঙ্কও তাকে বোঝানোর কোনও উপায় খুঁজে পায় না

অনেকদিন পর সিগারেট খাবার জন্য উচাটন লাগে নিজের হার্টের কারণে সিগারেট খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে বছর চারেক তবু লুকিয়ে দোকান থেকে একটা সিগারেট এনে টান দেবার লোভ সামলাতে পারে না সে একটা সুখটান দিতেই মাথার ভেতর যেন লোডশেডিং হয়েই আবার আলো চলে এল

সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার মুখে ডানহাতি গুমটি ভাঁড়ারঘরের মেঝেতে কমলা শুয়ে এটা কমলা আর হিটলারের থাকার জায়গা দোরের মুখে মৃগাঙ্ক দাঁড়ায় একখণ্ড মাদুরে কমলা পাশ ফিরে শুয়ে ভাঁজ করা পায়ের খানিক ওপরে কাপড় দলা হয়ে রয়েছে বাইরে ফাগুনের হাওয়া বইছে হালকা দুপুরের তাপ এ ঘরে পৌঁছায় না মৃগাঙ্কর কোনও সংকোচ হয় না কমলাকে দেখতে বুকের কাপড় নামিয়ে রেখেছে নিশ্চিন্তে দৃশ্যটা মৃগাঙ্ককে অসহায় করে দেয় শরীরের ভেতর এতকাল বাস করেও শরীরটা তার নয় আর মৃগাঙ্ক বুঝতে পারে সে দু’খণ্ড হয়ে আছে ঘরের ভেতর এক দ্যুতিমান আলোর শরীর ঘিরে একটি খণ্ড, একটি খণ্ড ঘরের চৌকাঠে

পায়ের কাছে লেজ উঁচু করে গলায় ঘড়ঘড় শব্দে হিটলার পায়ে গা ঘষছে তার ডাকে সেই আহ্লাদী উঁ-উঁ- শব্দ মৃগাঙ্ক নিজের গলায় শব্দ করে উঁ-উঁ- নরম ল্যাজের স্পর্শে তার গা শিরশির করে হিটলার তার মুখের দিকে তাকিয়ে মৃগাঙ্ক তার মুখের ভাষা পড়ে নেয় সহজেই খিদে পেয়েছে তার নতুন শরীরে নতুন খিদে মৃগাঙ্করও খিদে পেয়েছে হিটলারকে কোলে তুলে নিয়ে ডাঁটো পায়ে যুবকের মতো ওপরে উঠতে উঠতে সে হিটলারকে বলে, তুই খাবি, তারপর তোর হয়ে আমি

1 comment:

  1. তোমার কবিতা আগে পড়েছি। গল্প এই প্রথম পড়লাম। বেশ ভাল লাগল।

    ReplyDelete