বাক্‌ ১৪৫ ।। শীর্ষা

 

তিনটি গদ্য

ভাবনার মধ্যে গাছ বড়ো হচ্ছে। একটি দুটি করে পাতার সংখ্যা বাড়ছে। কর গোনার পাখিটি ফুড়ুৎ হলে গাঢ়তর হচ্ছে পাতার শেড। শেডের সবুজ। সবুজের মধ্যশিরা। মধ্যশিরার দুপাশে জালকাটা উপশিরা। যখন পাতাটি হাঁটতে হাঁটতে জীবনের শেষ সীমান্তে পৌঁছে যাবে, ওর রঙ, কারুকার্য – যাবতীয় যত্ন ওকে ছেড়ে যাবে। পাতাটি জানে। অথবা জানে না। শুধু থেকে যাবে বিস্তীর্ণ মরুভূমির মতো খাঁ খাঁ হলুদ মধ্যশিরাটি। এই মধ্যশিরাটি আসলে একটি রাস্তার রূপ। কিংবা অলঙ্করণ। যেমন সদর সড়ক থেকে অজস্র গলি পৌঁছে দেয় নির্দিষ্ট বাড়িতে। ঠিক তেমনটাই মধ্যশিরার দায়িত্ব। অসীম বয়োবৃদ্ধের গোঁফদাড়ির পাক মেখে মেখে মধ্যশিরাটি গাইড করে চলে তার শরীরের ওপর হাঁটতে থাকা প্রাণীটিকে। কিংবা হাওয়াটিকে। মধ্যশিরার শরীর বাড়লেও বয়স বাড়ে না। তাই চিরশত্রুর ঠুনকো তাকে গাছের থেকে আলাদা করে। স্বর্গ থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। পাশের বাড়ির কিংবা পাশের পাড়ার ছাগলটা ততক্ষণে মচমচ করে হেঁটে গ্যাছে ভাবনার গাছ কিংবা মধ্যশিরার সম্পূর্ণ অস্তিত্বের ওপর।

 

একটি ছাগলের দুর্দৈব নিয়ে কখনো চণ্ডীমণ্ডপে আলোচনা হয়নি। আসলে ছাগল কখনোই আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠতে পারেনি। সেই হয়ে উঠতে না পাড়ার মধ্যে কোনো কষ্ট কাছিমের পিঠ ধার করে ঘুম দেয় না। বরং এই যোগ্যতা না থাকাটুকু নিয়েই ছাগলটি বিন্দাস ঘুরে বেড়ায়। চণ্ডীমণ্ডপের আড্ডাবাজদের নটেগাছটি মুড়ো করে দিয়ে ছুট লাগায়। আর ততক্ষণে হাতা-খুন্তি-হাঁড়ি-পাতিল যা থাকে চোখের সামনে তাই নিয়েই আস্ত চণ্ডীমণ্ডপ ছাগলটির পিছনে… আলোচনা ছুটছে।

 

একটি বিকেলের মুখের মধ্যে দুটি মানুষের মুখের মাংস ভরা থাকতে পারে। অথবা মাংসের সঙ্গে কিছুটা লালা। লালায় দ্বিপ্রাহরিক আহারের স্বাদ। ভুক্তাবশেষ। করলার তেতোর মতো মা-বাবার আলাদা শোওয়া, চাটনির চিনির মতো বিধবা পিসির পাড়াটে সোহাগ অথবা বিস্বাদ পেঁপের পাতলা ঝোলের মতো ঠাকুমার মালা জপতে জপতে কতগুলো বেলা পড়ে এল গোনা। একটি বিকেলের মুখের মধ্যে এভাবে পুরো সংসার ঢুকে পড়ে। গ্রামকে গ্রাম, শহরকে শহর, দেশকে দেশ ঢুকে পড়ে। তারপর ঝুপ করে সন্ধ্যা বাড়ি ফিরলে নৈশভোজের টেবিলে ফুটবল মাঠ, চীন-ভারত বিভেদ এবং স্পুটনিক-করোনার খামখেয়ালি ভাজা পরিবেশিত হয় সানন্দে।

 

 

1 comment: