বাক্‌ ১৪৫ ।। দেবাশিস চন্দ

 

ডেটলাইন ২০২০


মানচিত্রে আঁকা ইঁদুরের লুকোচুরি, ফাঁদপাতা অলিগলি,

দূর দিগন্তের ওপার থেকে উড়ে আসা পাখি হারিয়েছে পথ,

পুড়ে যাচ্ছে সূর্যশরীর ক্রমাগত, পিচে আটকে যাচ্ছে বিপন্ন পা,

কলিজার অস্থির হাহাকারে দিনের পর রাত, রাতের পর ভোর,

ভারতবর্ষ হেঁটে চলেছে ভাত নামক অবাক রামধনুর খোঁজে,

বাড়ি নামক বুকের ভেতর লুকনো রঙিন প্রবালের খোঁজে,

অন্ধকার সময়ের খাঁজে খাঁজে অন্তরিনের অসুখ ছড়িয়ে যায়,

মাথার ওপর বটগাছ ছাতা ধরে না, নদী এসে দেয় না জল,

শের শাহের তৈরি এই রাজপথ, খিদের দৈত্য গিলে খাওয়া

ভারতবর্ষ চেনে না শের শাহকে, ঘুমিয়ে পড়ার আগে শেষবার

দেখে নেয় চাচার ফাটা চশমায় স্থির হয়ে থাকা চরকার বিদ্রুপ,

ছড়ানো মৃতদেহ ছেঁড়া চটির ক্রোধ চকচকে বর্শাফলকের মতো

ইন্ডিয়ার আরামকেদারায় প্রশ্নচিহ্ণ হয়ে লটকে থাকে বেবাক।



হাঁটে ভারতবর্ষ, যেভাবে একদিন হেঁটেছিলেন বিনোবা ভাবে।

 





স্পর্শবীজ

দূরে দূরে থাকা সরে সরে থাকা ভয়ে ভয়ে থাকা

নতুন এক অস্পৃশ্য মানচিত্র, নিঃসঙ্গতার ঝাপসা সিঁড়ি,

মুখোশে ঢাকা ভয়ে কম্পমান মুখ, বারান্দায় খালি চেয়ার,

কতদিন কেউ কথা কয় না, আদিম পৃথিবী যেন শুয়ে আছে।



সম্পর্কের সুতো বোনে সেলফোন, ফেসবুক,

ইশারা বিচ্ছিন্ন হলেও হৃদয়ে তো লাগেনি মড়ক,

দিশেহারা পথিক ফিরে আসে ঘরে, প্রাজ্ঞ বট দেয় ছায়া,

শোকের আগুনে পোড়া ছাই থেকে ওড়ে ফিনিক্স পাখি।



চুম্বনে আলিঙ্গনে দিগন্তে দিগন্তে অঙ্কুরিত স্পর্শবীজ

বৈশাখবৃষ্টি ধুয়ে দেয় মনমরা দুয়ারের অস্পৃশ্য দাগ

 

 





নতুন পৃথিবী

কতটা সরেছে কেয়ারি করা সাজানো বাগান

কতটা আঙিনার সোহাগজরিপ দিনরাত



কাতলা মাছের পেটে বিরিয়ানি, হাঙরের ঢেঁকুর

খাঁচার ভেতরে অবরুদ্ধ আনন্দের উচ্ছ্বল তরঙ্গ



সান্ধ্যটিভিতে পরবাসী শ্রমিকের শুকনো মুখ

ভাতের জন্য হাঁটা, শ্বাসকষ্টের ঝাপসা পরদা



উতরোল সন্ধ্যায় খোঁজ শুধু খোঁজ চর্বচোষ্য মদ্য

চকচকে শার্সির ভেতর দিয়ে অপরাহ্ণের ভোগান্ন



উলুখাগড়ার প্রাণের বিনিময়ে দিনরাত্রি সুখশয্যা

মৃত্যুর মৌন কথা ভেসে যায় অসময়ের বৃষ্টিতে



তবু উদাসীন অবহেলা ঠেলে ডেকে ওঠে দূরের পাখি

চতুর্থীর চাঁদ এসে উঁকি দিয়ে বলে পূর্ণিমার নেই দেরি

 



কাচের মতো ঠুনকো অবিন্যস্ত সময় যাবে একদিন মুছে

নতুন পৃথিবী দাঁড়িয়ে আছে পুকুরের জলের মতো সত্য

 

No comments:

Post a Comment