রাশি
রাশি যবের বানানো, আমি বলছি দেহ; ব্যবস্থা নির্ভুল হলে খাদ্য হতে পারে। পারে যুক্তির ফাটলে গুঁজে রাখতে গণিত। আমি বলছি ক্রিয়া। সতত বাইরের বল, বামন ও অবতার, কখন যে সুবিন্দু অব্দি প্রসারিত হবে, সামান্য কখন! আর জিহ্বা, চাবুক ও অস্থিহীন, কথা বলে, তুমুল রসালো, খাবারকে বানায় মণ্ড, গোল, শূন্যের মতো, উৎসর্গের মতো। আমি বলছি, ‘খাও’। যাঁতার পরিচারিকা, তুমি বাধ্য ও কুশলী, আজ যে নিশ্চেষ্ট, “শোনো”, আমি বলছি, “চূর্ণ করো শস্যের গৌরব”।
এতকাল সঙ্গে আছি, এবার বিকল্পে গিয়ে নিঃস্ব হতে চাই
পৃথিবী
পৃথিবী কূর্মের পিঠ, প্রাণ ভেতরে, তামাম। ডিম পাড়তে এসেছে জলের ধারে, এখনও পূর্ণিমা হতে চারশো নিশি বাকি। এখনও হাজার-বিত্তা-লম্বা রমণী ঝুড়ি কাঁখে ঘুরছে বালিতে। একটি সুর্যাস্তসম হাঁ এবং হাতগুলি একেকটি দিন। সন্তানকামনা ছাড়া তাঁর কাছে কিছুই চাইনি। কৌমের পুরুষেরা কাঁধে-কাঁধে চড়ে তাঁর চোখের সমান উঠি। পালাতে গিয়ে যেই প্রথম পা ফেলেছেন কম্পমান সব। আমরা হুড়মুড়িয়ে পড়ি, একে অপরের পিঠে, শুয়ে থাকি, অজীব খোলের মতো কেউ। কেউ কাছিমের মতো, এলোমেলো ছোটাছুটি করি।
নুনের আড়ত সিন্ধু, আমাদের চোখে জল ছিটিয়ে তাড়ায়
বৃক্ষ
বৃক্ষ শময়িতা, স্বাস্থ্যের পাতা থাকলে নগ্নতা কাবিল হয় না। ডাল, গাঁট, কোটর ও স্পর্শের বুজরুগি ডাক। প্রবৃত্তি, কুঠার। আগুনের ব্যবস্থা, সুলভ। দাহের উৎসবে দলছুট পোকা এসেছে, সেই ব্যধি, প্রমোদও তো সেই। তাকে দিই চাপড় ও বিষ, জাগে ও ঘুমায়। দুভাবেই মনোগ্রাহী লাগে। শিরায় যে ছোটে জল, যে হাওয়ায় ভুলুক টম্বুর, তাদের সাবাড় করি, আরও খাই চিন্তামণি রজ। মুহূর্তে বমন করি, মুহূর্তে লেহন করি আত্ম-মালামাল। সেরে ওঠার মতন সোজা শয্যা নেই, সঙ্গিনীও নেই।
ঝরাপাতা ঝাঁট দিয়ে জড়ো করে রাখছেন সারের দেবতা
ফুল
ফুল, বালকের নাম, ঈর্ষার চাকতি তাকে আঘাত করেছে। বন্ধুর কান্নার পাশে সিপাহি শিশুমার, আর একটি কাক খোঁজে প্রকৃত দোষীকে। আমরা পুষি রহস্যের মূষিক এবং দস্তাবেজ নষ্ট করতে কাজে লাগাই তাদের। সেসব টুকরোর পাপড়ি, সেসব পাপড়িতে গ্রিক পুরাণের দাগ, আজ বলেই ফেললাম, “হায়”, বলেই ফেললাম, “প্রেম বয়স মানে না, তাই টিকে যায়”।
আমারও স্মৃতির ঘাস আবার সবুজ হয়ে উঠেছে, দেখেছ?
আমারও স্মৃতির ঘাসে ঢাকা পড়ে আছে, প্রিয়, রুপোলি ধনুক
ভাষা
ভাষা রহস্যসংকুল। বুঝতে নয় দিন, নয় রাত্রি ঝুলে থাকতে হবে গাছ থেকে। শরীরে একটি বর্শা এফোঁড়-ওফোঁড়। খাদ্য নেই, পানীয় নেই— নয় দিন, নয় রাত্রি। ব্যথা ছাড়া সঙ্গীও নেই। যখন পেয়াদার মতো মৃত্যু আসছে, তার পায়ের শব্দ শুনলে তবে তো সহসা চিহ্নের ক্ষমতা চেনা যাবে, দখল তবে তো। রজ্জু ছিঁড়ে পতন তারপর। অথচ সকল জ্ঞান রয়েছে কূপের জলে। এবং তা পান করতে একটি চক্ষুকে ফেলে দিতে হবে জলাশয়ে। এবং একটির বেশি চোখে দৃষ্টির ছুরি ধরে রাখতে পারে না। কান দুটি বেশি অনুচর।
কূপের মালিকানা মাতৃকূলের। আমার চোখের পাশে রাখি মাতুলের মাথা আর শিঙাটি তোমাকে দিই।
ফুঁ দিও শেষের দিনে, কু দিও নিখিলে
শাঁখ
শাঁখ, সুখ ও সম্বৃদ্ধি। হাওয়াকে জাহির করতে বাঁকা পথ, ধাপ, পেরিয়ে শূন্যের দ্বার, হে মধুর, অবাস্তব ও হে। আমি বায়ব হওয়ার লোভে কর্মে ঢুকে প্রযুক্ত হয়েছি। আঙুলের দাগ আর চিরে-যাওয়া সমগ্র-ভন্ডুল। নথি, স্বীয় ও বিবাদী। ডাকে ও হুল্লোড় করে, কান পেতে আমি শুনি বালির প্রপাত আর জল, পুরুষ-নারীর মতো প্রতিলোম, চিৎ ও উপুড়।
তোমার অনামিকায় ধন্যবাদ রেখে ভেবেছি, ক্ষুৎপিপাসা মানানসই হবে। পাখিরা বসবে ডালে, কুহু দেবে, নিদ্রার ভেতর ভাঙবে নিদ্রার শুশ্রূষা।
বাজাব যে, অথবা বাজাব না, সময়সংঘের খাতা মঞ্জুর করে যদি আমারও স্বাক্ষর
খুব ভালো লাগল। 'ভাষা' অসাধারণ।
ReplyDeleteসুন্দর
ReplyDeleteমেধা ও মননের সুখ
ReplyDeleteখুব ভালো কবিতা এত ভাঙন বিস্তার। জীবনের এক গভীরতম প্রকাশ ❤
ReplyDeleteঅত্যন্ত ভালো সবগুলোই...💐💐
ReplyDeleteঅত্যন্ত ভালো সবগুলোই...💐💐
ReplyDeleteঅত্যন্ত ভালো সবগুলোই...💐💐
ReplyDeleteদুরন্ত।এর চেয়ে বেশিকিছু না বলাই ভালো
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো সবকটিই, অত্যন্ত তৃপ্তিদায়ক ❤
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো সবকটিই, অত্যন্ত তৃপ্তিদায়ক ❤
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো সবকটিই, অত্যন্ত তৃপ্তিদায়ক ❤
ReplyDeleteকবিতাগুলি অনবদ্য।
ReplyDeleteএমন কবিতাগুচ্ছ নিয়ে কাটিয়ে দেওয়া যায় ঘন্টার পর ঘন্টা।
ReplyDeleteঅসাধারণ! মুগ্ধ!
ReplyDeleteঅসাধারণ সব লেখা। বারবার পড়ার মতো
ReplyDelete